‘যেটা ডিসাইড করব, সেটা করবই—এই ডিটারমিনেশনটা থাকতে হবে’

আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রিয়তা তালুকদার।

'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরা গ্রামের মেয়ে প্রিয়তা তালুকদার। প্রিয়তা ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিকাশের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগে জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত। গত ৩০ মার্চ ২০২৩ তারিখে 'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে শোনালের তাঁর অদ্বিতীয়া হয়ে ওঠার গল্প।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রিয়তার মা ঢাকায় এসে একটা সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক দিন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়। বাবা যেহেতু পরিবারের তেমন দেখভাল করতেন না, সে সময় প্রিয়তা তার নানি বাড়িতে চলে যেতে হয়। ওখানে থেকেই তিনি এসএসসি পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বাবা বলতেন, মেয়েকে এত পড়িয়ে কী হবে! তবে সব বাধা উপেক্ষা করে প্রিয়তা এগিয়ে চলেছেন আপন গতিতে।

এইউডব্লিউতে আসার ব্যাপারে প্রিয়তা জানান, বাবা উদাসীন ছিলেন, আমাদের দেখাশোনা করতেন না। সে জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে গণিত বিভাবে ভর্তি করান। পরে এক চাচির মাধ্যমে এইউডব্লিউর ব্যাপারে জানতে পারি যে, এখানে বৃত্তি নিয়ে পড়ার ব্যবস্থা আছে। প্রস্তুতি নিয়ে একটা এনজিও মারফত আবেদন করি এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। আমার মনে আছে, মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম ১৫ মিনিট ইংরেজিতে কথা বলেছি। চূড়ান্তভাবে আমাকে বৃত্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। এইউডব্লিউতে ভর্তির বিষয়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত। এইউডব্লিউ আমাকে পরিবর্তন করে দিয়েছে, স্বাধীন হতে শিখিয়েছে। এভাবে ২০২২ সালে আমি স্নাতক সম্পন্ন করি। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বিকাশে ইন্টার্নশিপ করে জানুয়ারি ২০২৩ এ বিকাশে চাকরি পাই। এখন আমি বিকাশের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগে জুনিয়র অফিসার হিসাবে কর্মরত।

তিনি জানান, প্রথম যখন ঢাকায় আসি, মা আসতে দিতে চাননি। কিন্তু আমি সব সামলে নিয়েছি। নিজের বাসা ঠিক করা থেকে শুরু করে সব ম্যানেজ করেছি।

অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরা গ্রামের মেয়ে প্রিয়তা তালুকদার। প্রিয়তা ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের একজন।

এইউডব্লিউ’র পরিবেশে কীভাবে খাপ খাওয়ালেন? এর উত্তরে প্রিয়তা বলেন, প্রথম যেদিন এইউডব্লিউতে পা রাখি সবাই অনেক সহযোগিতা করেছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও অনেক হেল্পফুল। আমার রুম-মেটরা ছিল বিদেশি, তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ইংরেজি ভীতি দূর হয় যায়। আসলে কালচারাল ডাইভার্সিটি এমনিতেই অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। আর আমাদের প্রফেসরগণ অনেক ভালো, স্পেস দেয়।’

এইউডব্লিউরএক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে প্রিয়তা বলেন, এখানে সবগুলো বিভাগের ডিজাইন এ রকম। প্রত্যেককেই কিছু না কিছু করতেই হয়। যেটা খুব দরকার। এটা সব সময় মোটিভেট করে।

এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য প্রিয়তার পরামর্শ, ‘এইউডব্লিউতে যা যা করার আছে, সবই অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। আমি যেটা ডিসাইড করব, সেটা করবই—এই ডিটারমিনেশনটা থাকতে হবে। এটা খুব জরুরি এখানে।'

সবশেষ বলেন, ‘প্রথম আলোকে ধন্যবাদ আমাদের পাশে থাকার জন্য এবং আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।’

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।