স্বপ্ন দেখা
'মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চাই'
দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার সুযোগ পান তাঁরা। আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা তাঁদের দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ জন এবং ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসির সহযোগিতায় ৭৬ জনসহ মোট ১১৮ জন এ পর্যন্ত এই বৃত্তি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬৫ জনের স্নাতক শেষ হয়েছে, যাঁদের মধ্যে অনেকেই দেশে-বিদেশে ভালো অবস্থানে আছেন। ২০২৪ সালেও বৃত্তি পেয়েছেন ১০ জন। পড়ুন তাঁদের মধ্যে মৌলভীবাজারের প্রিয়াংকা রানী পালের জীবনের অভিব্যক্তি, তাঁর এগিয়ে চলার গল্প।
চা–বাগানের সাধারণ শ্রমিক পরিবারে আমার জন্ম। মা-বাবার স্বল্প উপার্জনে যে পড়ালেখা করা কঠিন, এটা খুব ছোটবেলাতেই বুঝতে পেরেছিলাম। কুচাই চা–বাগান থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরের গোয়ালবাড়ি হাজি আপ্তাব উদ্দিন কলেজে যখন ভর্তি হই, খরচ বহন করা মা-বাবার জন্য ছিল অসম্ভব। একটা এনজিও থেকে কিস্তি নিয়ে তবু বাবা ভর্তি করিয়ে দেন। এভাবেই নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এইচএসসির পর ভর্তি হই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে।
আমাদের চা-বাগান থেকে আমিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছি। কিন্তু সে জন্য কত যে সমালোচনা শুনতে হয়েছে, হচ্ছে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, মেয়েদের জীবন চারদেয়ালের মধ্যেই সুন্দর। তবু তিন কন্যার পিতা–মাতা হওয়া সত্ত্বেও আমার মা-বাবা আমাদের পড়ালেখা করাতে পিছপা হননি। উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমি আমাদের গ্রামের প্রত্যেকটা মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই, মেয়েদের পক্ষেও চারদেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব। ছোটবেলা থেকে মা-বাবাকে শুধু পরিশ্রমই করতে দেখেছি। এবার তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।