‘নিজেকে তৈরি করার দায়িত্ব নিজের— সেই প্রচেষ্টা নিয়ে এগোতে হবে’

আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া বন্যা উরাং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি (পিপিই) বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সুনছড়া চা-বাগানের মেয়ে বন্যা উরাং। চা-বাগানের কাজে যে আয় হয়, তা দিয়ে পরিবার চালানোই কঠিন। সেখানে পড়াশোনা করাটা অনেকটা বিলাসিতা। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও বন্যা ওরাং থেমে থাকেননি। নিজের একান্ত চেষ্টায় স্নাতক পর্যন্ত যেতে পেরেছেন। তিনি ২০২০ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান। শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি (পিপিই) বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি।

স্বপ্ন দেখেন শিক্ষকতায় যাওয়ার। সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছাও আছে তাঁর। পরিবারের প্রথম নারী হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে যাওয়া এবং স্বপ্নের কথাগুলো ওঠে এল ৩০ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

প্রথমেই একটা ছক করে ফেলি। প্রায়োরিটি বেসিসে তালিকা করি। সেভাবে সব ম্যানেজ করি। সময়কে ভাগ করে কাজ করি— বন্যা উরাং।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অদ্বিতীয়া হওয়ার গল্প জানালেন তিনি। একদম ছোটবেলা থেকে নিজের পড়াশোনার গল্প জানালেন। বন্যা বলেন, ‘আমার জন্ম কলমগঞ্জের সুনছড়া চা বাগানে। চা বাগানেই আমার বেড়ে ওঠা। পড়াশোনাও ওখানেই। বাগানের প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক, স্থানীয় স্কুলে মাধ্যমিক ও মফস্বলে উচ্চমাধ্যমিক পড়েছি। পরে বাংলায় স্নাতক ভর্তি হলেও পরে সবার আশীর্বাদে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ভর্তির সুযোগ পাই। এখন স্নাতক শেষ বর্ষে আছি।’

পরক্ষণেই বন্যা জানান, ‘আমার পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমি চেয়েছি সব সময় কম খরচের মধ্যে ভালো করে পড়াশোনা করা। যার কারণে পরিবারকে তেমন চাপ নিতে হয়নি। প্রথমে সেনাবাহিনীতে যেতে চাইতাম—তবে পরে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে তেমন পড়াশোনা করতে পারিনি। সে জন্য ভেবেছিলাম আমার স্নাতক পড়া হবে না। পরে সরকারি কলেজে ভর্তি হই। পরে এক বান্ধবীর পরামর্শে এইউডব্লিউতে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। এখন স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আমি।’

এখন বাবা-মায়ের অনুভূতি কেমন? এর উত্তরে বন্যা বলেন, ‘আমার জন্য তাঁরা গর্ববোধ করেন। আমাকে দেখে আমার ভাই-বোনেরা শিখছে। আমি ওদের দায়িত্ব নিচ্ছি।’

এখন কি স্বপ্ন দেখেন বন্যা? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর করব। পরে ভালো কিছু করার চেষ্টা আছে। বিসিএস দিয়ে শিক্ষকতায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে আমার। ২০২০ সালে যখন এইউডব্লিউতে ভর্তি হলাম তখন করোনা সময়। ওই সময়টাতে অনলাইনে সব হতো। আমার স্মার্টফোন ছিল না। আমার ভাইয়ের একটা ছিল। ওটা দিয়ে ক্লাস করতাম। আমার ভাই অনেক সহযোগিতা করছে তখন।’

ওই সময়টাতে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল? এর উত্তরে বন্যা বলেন, ‘চা বাগানে এমনিতেই নেটওয়ার্ক তেমন থাকে না। আমার গ্রামেও তাই। অনলাইনে ক্লাস হতো। বাড়ির বাইরে গিয়ে যেখানে নেটওয়ার্ক থাকত, সেখানে ক্লাস করতাম। বৃষ্টির সময়টাতে এমন হয়েছে যে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিডটার্ম পরীক্ষা দিয়েছি।’

নিজেকে তৈরি করার দায়িত্ব নিজের। সেই প্রচেষ্টা নিয়ে রুটিন করে এগোতে হবে। একাডেমিক বিষয়গুলোতে প্রায়োরিটি দিতে হবে। ভালো ফল অর্জন করতে হবে— বন্যা উরাং।

এইউডব্লিউতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হলো? বন্যা সহজিয়া উত্তর। বাংলা মাধ্যম থেকে গিয়েছি। এদিকে এইউডব্লিউর পরিবেশ অন্যরকম। সব সময় ইংরেজিতে কমিউনিকেট করতে হয়। কীভাবে কমিউনিকেট করব—সেই ভয়টা ছিল। সে জন্য প্রথম প্রথম চুপচাপ থাকতাম। তবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন আমি ফ্রেশারদের ইংরেজিতে ক্লাস নিই।

 এইউডব্লিউর প্রথম দিককার বন্যা আর আজকের বন্যা আত্মবিশ্বাসের রেটিং করতে বলেতে কত দেবেন আপনি? ১০ এ নিজেকে ৮ দেবেন জানালেন বন্যা।

 এইউডব্লিউতে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিটাস্কিং কাজ করতে হয়। এগুলোতে কীভাবে নিজেকে মানিয়েছেন? উত্তরে বন্যা জানালেন, ‘প্রথমেই একটা ছক করে ফেলি। প্রায়োরিটি বেসিসে তালিকা করি। সেভাবে সব ম্যানেজ করি। সময়কে ভাগ করে কাজ করি।’

এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের উদ্দেশ্যে বন্যা বলেন, ‘নিজেকে তৈরি করার দায়িত্ব নিজের। সেই প্রচেষ্টা নিয়ে রুটিন করে এগোতে হবে। একাডেমিক বিষয়গুলোতে প্রায়োরিটি দিতে হবে। ভালো ফল অর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি করতে হবে। প্রথমদিকে একটু কঠিন হলেও পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে।’

অনুষ্ঠান শেষে বন্যা বলেন, ‘ধন্যবাদ প্রথম আলো ও আইডিএলসিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে সুন্দর করবার জন্য।’

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।