প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন হলো ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’। এ আয়োজনে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া একজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনলাইন এই আয়োজনে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই বেলা ৩টায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল খাগড়াছড়ি সদরের মহালছাড়া গ্রামের মেয়ে হেনা ত্রিপুরাকে। তিনি তাঁর পরিবারের প্রথম কোনো সদস্য যিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। পরিবারের প্রথম নারী হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে যাওয়া এবং স্বপ্নের কথাগুলো ওঠে এসেছে এ অনুষ্ঠানে। আয়োজনটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। প্রশ্ন উত্তর আলোকে অনুষ্ঠানের চুম্বক অংশ নিয়ে লিখেছেন মো. নাজিম উদ্দিন।
কেমন আছেন হেনা?
হেনা ত্রিপুরা: ভালো আছি।
আপনার ছোটবেলার গল্পটা জানতে চাই। কেমন ছিল আপনার ছোটবেলা?
হেনা ত্রিপুরা: ছোটবেলা খুব মজার ছিল। শহর থেকে দূরে থাকতাম। একবারে পাহাড়ি এলাকার গ্রামে ছিলাম।
তখন কি এ রকম কোনো স্বপ্ন ছিল যে, গ্রাম থেকে শহরে যেতে হবে?
হেনা ত্রিপুরা: কখনোই ভাবিনি। কোনো সুযোগও ছিল না। আগে ভাবতাম, বড় হয়ে পড়াশোনা করব, কিছু একটা করব। বড় হতে হতে বুঝতে পারলাম আরও অনেক কিছু করার আছে আমার।
এইউডব্লিউ’র খবর জানলেন কীভাবে?
হেনা ত্রিপুরা: আমি কলেজ পর্যায়ে খাগড়াছড়িতে পড়াশোনা করেছি। এইচএসসি পাসের পর স্নাতক ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন কোভিডের সময়। একদিন ফেসবুকে এইউডব্লিউ’র একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। ওখানে শুধু মেয়েদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধার কথা বলা হয়। তারপর সব দেখেশুনে আবেদন করি পরীক্ষা দিই। পরে দেখি হয়ে গেছে আমার।
এইউডব্লিউতে সুযোগ হওয়ার পর বাবা-মা কি দূরে যেতে সম্মত হলো?
হেনা ত্রিপুরা: আসলে আমি কখনো বাড়ির বাইরে থাকিনি। এটা নিয়ে তাদের একটা চিন্তা ছিল। তবে জেনেছিলাম যে, এইউডব্লিউতে সব রকম সুবিধা আছে। বাবা আমাকে প্রথম দিন নিয়ে গিয়েছিলেন। মেয়েদের হোস্টেলে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এমনকি বাবা-মাকেও। তখন বাবার চোখটা জলে ছলছল করছিল।
নতুন পরিবেশ, ক্লাস, পরীক্ষা সব সামলে নিলেন কিভাবে?
হেনা ত্রিপুরা: প্রথমতো, ভাষাগত একটা সমস্যা ছিল। আমি তো বাংলা মাধ্যমের ছিলাম। তারপরও শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় সব ঠিক হয়ে গেছে। সহপাঠী থেকে শুরু করে সবাই খুব ভালো ছিল। ইনস্ট্রাক্টরসহ সবাই অনেক হেল্পফুল। তাই সকল জড়তা সহজেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সে উচ্চতর পড়াশোনা করে কোথায় যেতে হেনা?
হেনা ত্রিপুরা: বর্তমানে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক উত্থানপতন হচ্ছে। অর্থনীতি, জিডিপিকে সাসটেইনেবল করার বিষয়ে আরও ডিপলি গবেষণা করতে চাই আমি। সে জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সকে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বেছে নিয়েছি।
আপনার সঙ্গে আপনার বাবা-মায়ের স্বপ্নও কি একই?
হেনা ত্রিপুরা: ছোট থেকেই বাবা-মা আমাকে কোনো বিষয়ে চাপ দেয়নি। কখনো বলেননি তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। আমি যেটা করতে চেয়েছি সেটাতেই ওনারা রাজি ছিলেন। আমাকে সব সময় ওনারা সহযোগিতা করেছে। সুতরাং আমার স্বপ্নটাই ওনাদের স্বপ্ন।
এখন যারা অদ্বিতীয়া আছেন তাদের জন্য আপনার যদি কোনো পরামর্শ থাকে।
হেনা ত্রিপুরা: প্রথমেই বলব টাইম ম্যানেজমেন্টের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। ফোকাস ঠিক করতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস করতে হবে। মন ভালো রাখতে হলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে। প্রথমত একাডেমিক পড়াশোনা এবং দ্বিতীয়ত ক্লাব অ্যাকটিভিটিস, অনলাইন বিভিন্ন কোর্স, লিডারশিপ ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করতে হবে।
সুন্দর পরামর্শ দেওয়া ও আজকের এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সুন্দর স্বপ্নগুলো পূরণ হোক সেই প্রত্যাশায় শেষ করছি।
হেনা ত্রিপুরা: আপনারকেও ধন্যবাদ।