‘শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলি’

আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত মোহিনী আফরোজ।

মোহিনী আফরোজের বাড়ি রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার বিশ্বনাথ গ্রামে। ৩ বোন ১ ভাইরে মধ্যে মোহিনী সবার বড়। তাঁর বাবা কৃষক, মা গৃহিণী। অভাব অনটনের সংসারে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা যে সব বিষয়েই প্রাইভেট পড়তে হয়, মোহিনী সেই সুযোগ তেমন পাননি। নিজের চেষ্টায় এসএসসিতে জিপিএ-এ, এইচএসসিতে-এ মাইনাস পেলেন। এরপর তাঁকে আর পড়ালেখা করানোর মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না পরিবারের। তাই উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর চট্টগ্রামে এসে একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন তিনি। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সব বাধা অতিক্রম করে অদম্য ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মোহিনী। তিনি ২০১৮ সালে আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন। শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে স্নাতক পড়ছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে। বর্তমানে তিনি জনস্বাস্থ্য বিভাগে শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত। আশা রাখছেন ডিসেম্বরে স্নাতক শেষ করতে পারবেন।

মোহিনী আফরোজই তাঁর পরিবারে গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়া প্রথম নারী। তাঁর যাত্রার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাড়ির পাশেই পড়াশোনা করেছি। পরে অনার্সে মহসিন কলেজে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হই। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারিনি। তখন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করি। ওখানেই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) সম্পর্কে জানতে পারি, পরে পরীক্ষা দিয়ে আরএমজি কোটায় ভর্তির সুযোগ পাই। আমার চাকরিটা চলে যায়। কিন্তু চাকরিটা চলে যাওয়ায় ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমি অনেক হতাশায় পড়ে ভর্তির আশা ছেড়েই দেই। তখন এইউডব্লিউ থেকে একটা ফোন আসে। ফোনে বলা হয়, ‘তোমার ফল ভালো হওয়ায় প্রথম লিস্টে নাম এসেছিল। সে জন্য প্রথম আলোর বৃত্তিটা দিয়ে তোমাকে নিতে চাই।’ তখন আমি খুশিতে কেঁদে ফেলি।’

উল্লেখ্য যে, এইচএসসির পর বিয়ে হয়ে যায় মোহিনীর। বিয়ের পরেই তিনি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী ছিলেন। সব বাধা অতিক্রম করে বৃত্তি সহযোগিতা নিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ভর্তির সুযোগ করে নেন। ভর্তি সুযোগ পেয়ে মা-বাবা অনেক খুশি হয়েছেন। তবে এ যাত্রায় তাঁর স্বামী তাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। এখন একটাই ইচ্ছা জনস্বাস্থ্য স্নাতক শেষ করে ভালো কিছু করবেন, যাতে মানুষের জন্য কিছু করা যায়।’