নিজের কাজটা সুন্দর ও সময় মতো করলে সফলতা আসবেই
নওগাঁর মেয়ে সুমাইয়া তাসনিম। তাঁর বাবা মহিদুল আলম চায়ের দোকান করে সংসার চালান। মা ফাহিমা বেগম গৃহিণী। বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করবেন। কিন্তু অভাবের কারণে সেই স্বপ্ন বারবার ধাক্কা খাচ্ছিল। এমন সময় গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে জানতে পারেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) ভর্তির বিষয়টি। লিখিত আর মৌখিক পরীক্ষায়ও উতরে যান সুমাইয়া। পরে বৃত্তি নিয়ে সুযোগ পান স্নাতক ভর্তির। এদিকে ২০১৯ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পান সুমাইয়া। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের (এইউডব্লিউ) জনস্বাস্থ্য বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর স্বপ্ন শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়ার। বিদেশ থেকে জনস্বাস্থ্য বিভাগে পড়াশোনা করে দেশের জনগণের সেবা ও বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান সুমাইয়া।
প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে এ পর্বের অতিথি ছিলেন সুমাইয়া তাসনিম। ৩১ মার্চ ২০২৪, বেলা ৩টার অনুষ্ঠানে ওঠে এল তাঁর জীবনের নানা গল্প। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছোটবেলার গল্প বলতে গিয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘আমি নওগাঁ থেকে এসেছি। এইউডব্লিউতে আসার পর আমার মনে হয়েছে, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জব করব। আমার সিনিয়ররা অনেকেই জয়েন করেছে। এটা দেখেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন তীব্র হয়েছে। আমিও পারব—এটা মনে হয়েছে। আমার পরিবার, আমার শিক্ষকেরা অনেক সাপোর্ট করেছে আমাকে। তাই মনে হয়েছে, আমি শিক্ষক হলে আমিও অন্যদের সাপোর্ট করতে পারব।’
নওগাঁ থেকে চট্টগ্রাম আসার গল্প বলতে গিয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘বাবা-মা কখনো বাধা দেয়নি। সব সময় সাপোর্ট করেছে। বরং আমি এত দূরে চলে যাচ্ছি, তাই আমারই মন খারাপ হয়েছে আসার সময়।
কোনো কিছুতেই ঘাবড়ানো যাবে না। টাইম ম্যানেজ করে কাজ করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।
প্রথম এইউডব্লিউতে যাওয়ার পর কি হলো? উত্তরে সুমাইয়া জানালেন ‘প্রথম যেদিন এইউডব্লিউতে যাই, ওরিয়েন্টেশন হওয়ার পরপর রুমে যাই। এখানে কালচারটা আলাদা। রুমে সিনিয়র আফগাম এক আপু ছিল। তারা অনেক সহযোগিতা করেছে। তবে বাংলা মাধ্যমের হওয়ায় যোগাযোগ একটু কঠিন ছিল। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।’
এইউডব্লিউতে এক্সট্রা কারিকুলার ব্যাপারে সুমাইয়া বলেন, আমি ক্লাবগুলোতে যুক্ত ছিলাম। এখানে সবাই যুক্ত থাকে, ভলান্টারি কাজে যুক্ত থাকে। আমি এখনো ক্লাবগুলোতে যুক্ত আছি। ডিবেট, ফটোগ্রাফি ক্লাবে যুক্ত আছি। এর আগে সোশ্যাল সার্ভিস ক্লাবে যুক্ত ছিলাম। এর বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, ইন্টার্নশিপ করেছি, পার্ট-টাইম জব করেছি।
সবকিছু কীভাবে সামলেছেন? তিনি জানালেন, ‘ক্লাব, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, পরীক্ষা এগুলোর জন্য সময় ভাগ করে রাখি। রুটিন মাফিক চলি। যখনে কোন ইভেন্ট থাকে, তখন একটু পরিবর্তন করে নিতে হয়। কোনো না কোনা উপায়ে এটা ম্যানেজ হয়ে যায়।’
এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য সুমাইয়ার পরামর্শ হলো ‘কোনো কিছুতেই ঘাবড়ানো যাবে না। টাইম ম্যানেজ করে কাজ করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। মনোবল থাকতে হবে। কোনো কিছু সহজে পেলেও সহজ মনে না করা। কাজটা সুন্দর এবং সময় থাকতে করতে হবে। তাহলে সফলতা আসবেই।’
অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।