দেশের বাইরে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়াই সালমার লক্ষ্য এখন

অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার অন্তর্গত শেখেরখীল ইউনিয়নের মেয়ে সালমা হাশেম।

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন 'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানের এ পর্বের অতিথি ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনর পাবলিক হেলথ এবং বায়োইনফরমেটিক্স ও বায়োটেকনোলজি থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করা সালমা হাশেম। তিনি ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান। শিক্ষাবৃত্তি সহায়তায় পরিবারের প্রথম নারী যিনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এখন একটাই ইচ্ছা, বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর করবেন। তাঁর এই স্বপ্ন, পথ চলার নানা বিষয় ওঠে আসে ৩১ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার অন্তর্গত শেখেরখীল ইউনিয়নের মেয়ে সালমা হাশেম। বাবা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, মা গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট বোন এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবার একার আয়ে সংসার চালানো ও দুই বোনের পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন ছিল। এমতাবস্থায় শিক্ষাবৃত্তি তাঁর পড়াশোনার পথকে অনেক সহজ করেছে।

আমি পাবলিক হেলথে উচ্চতর ডিগ্রি নিব, অসংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণা করব। মূলত হরমোনাল ডিসঅর্ডার নিয়ে কাজ করব। আমি মানুষকে সচেতন করতে চাই— সালমা হাশেম।

সালমা হাশেম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। মা-বাবাকে প্রাউড ফিল করাতে ভালো লাগত। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছি। এভাবে এসএসসি ও এইচএসসি ভালো ফল করে মেডিকেলের জন্য চেষ্টা করেছি। যখন মেডিকেলে হলো না, তখন মাথায় এসেছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে পড়ব। তখন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফল উইমেনর পাবলিক হেলথে পড়ার চিন্তা করি। কিন্তু এখানে খরচ অনেক, বৃত্তি ছাড়া সম্ভব নয়। তাই পরীক্ষা দিই, টিকে যাই এবং বৃত্তির জন্যও মনোনীত হই। এভাবে পাবলিক হেলথে পড়া শুরু। পরে ডাবল মেজর করি।’

ডাবল মেজর নেওয়ার ইচ্ছাটা কীভাবে এল? এর উত্তরে সালমা বলেন, আমার অনেক বিষয় নিয়ে জানতে ভালো লাগে। তাছাড়া যাদের সিজিপিএ ভালো ছিল, তাদের ইউনিভার্সিটি থেকে ডাবল মেজর করা সুযোগ দিয়েছিল। আমি এই সুযোগটা নিয়েছি।’

এইউডব্লিউতে পথ চলার গল্পটা কেমন ছিল? এ ব্যাপারে সালমা জানালেন, ‘প্রথমে আমারও সমস্যা হয়েছে। যদিও আগে থেকেই জানতাম যে এখানে অনেক ডাইভার্সিটি আছে। সবার সঙ্গে যোগাযোগ, পথ চলা একটু কঠিন ছিল। তবে সিনিয়রেরা, ইনস্ট্রাক্টরা অনেক হেল্পফুল। আর প্রফেসরগণ আরও বেশি। তাই সব কাটিয়ে উঠেছি।’

স্নাতক তো শেষ হলো, পরের স্বপ্নটা কি, এ ব্যাপারে জানলেন সালমা। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে স্নাতকোত্তর করব। আগে থেকেই এমন স্বপ্ন ছিল আমার। এইউডব্লিউতে এসে এই স্বপ্ন আরও বড় হয়। বাইরে থেকে স্নাতকোত্তর করার পর পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে।’

আপনার এগিয়ে যাওয়ার মটিভেশনটা পেলেন কই? এর উত্তরে তিনি জানান, আসলে এইউডব্লিউর পরিবেশটাই এমন। প্রফেসর, সিনিয়র, জুনিয়র সবারই অনেক হেল্পফুল। তা ছাড়া আমি নিজে নিজেই বুঝতাম—আমি কই যাচ্ছি। সুতরাং কোন সমস্যা হতো না।

সালমা তাঁর স্বপ্ন নিয়ে বলতে গিয়ে আরও বলেন, ‘আমি পাবলিক হেলথে উচ্চতর ডিগ্রি নিব, অসংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণা করব। মূলত হরমোনাল ডিসঅর্ডার নিয়ে কাজ করব। আমি মানুষকে সচেতন করতে চাই। আর এইউডব্লিউ নিয়ে যদি বলি, আমার পুরো লাইফটাই চেঞ্জ করে দিয়েছে। আর সবশেষে প্রথম আলো ও আইডিএলসিকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে অদ্বিতীয়া হিসেবে নির্বাচন করার জন্য, পাশে থাকার জন্য।

উল্লেখ্য, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ অসচ্ছল, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে প্রথম আলো ট্রাস্ট। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন।

২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নতুনভাবে নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৫৬ জনসহ ২০২২ পর্যন্ত মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।