সাক্ষাৎকার

নিজেকে স্বাবলম্বী নারী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রত্যয়ী মৌ

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন হলো ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’। এ আয়োজনে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া একজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনলাইন এই আয়োজনে ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ বেলা ৩টায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের চাকলাপুঞ্জি চা-বাগানের মেয়ে আফরিন মৌ রিমুকে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি পেয়ে পরিবারের প্রথম নারী হিসেবে স্নাতক পর্যায়ে যাওয়া এবং স্বপ্নের কথাগুলো ওঠে এসেছে এ অনুষ্ঠানে। আয়োজনটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। প্রশ্ন উত্তর আলোকে অনুষ্ঠানের চুম্বক অংশ নিয়ে লিখেছেন মো. নাজিম উদ্দিন।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

কেমন ছিল আপনার ছোটবেলা? শুনতে চাই।

আফরিন মৌ রিমু: ছোটবেলা বলতে-আমি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের চা-বাগান থেকে ওঠে আসা মেয়ে। বাবা-মা চা শ্রমিক ছিলেন। আমার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় বাবা-মার হাত ধরেই। গ্রাম থেকেই প্রাইমারি ও এসএসসি পাস করি। পরে নিজ জেলা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করি। পরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) চা-বাগান কোটায় আবেদন করি। পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই, ভর্তির সুযোগ পাই। এখন শেষ বর্ষে আছি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

প্রায় চার বছর অতিক্রম করলেন এইউডব্লিউতে। কোনো চ্যালেঞ্জ ফেইস করেছেন কি?

আফরিন মৌ রিমু: শুরুতে আমার জন্য সহজ ছিল না। আমি যেহেতু বাংলা মাধ্যম থেকে এসেছি, তাই আমার জন্য আরও কঠিন ছিল। এখানে সব ইংরেজি কারিকুলাম এবং সহপাঠীরা বিদেশি। সে জন্য প্রথমে অনেক জড়তা কাজ করত। তবে অনুশীলনের মাধ্যমে ঠিক হয়ে গেছে। তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের মেয়েরা হওয়ায় সাংস্কৃতিক ভিন্নতাও অনেক। এগুলোতে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। এইউডব্লিউতে সব সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখে। আমি যখন ইউজি-৩ তে ‍ওঠি, তখন বুঝতে পারি যে, আমি অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছি। পরে অনেক করে টিচিং অ্যাসিসটেন্স হিসেবে কাজ পাই। নতুন আগতদের নানাভাবে সহযোগিতা করি। এভাবে নিজেকে ইমপ্রোভ করছি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এখনকার আফরিন আর আগের আফরিন তুলনা করতে বললে নিজেকে ১০-এ কত নম্বর দেবেন?

আফরিন মৌ রিমু: আমি নিজেকে ১০-এ ৮ দিতে চাই। এইউডব্লিউতে আসার পর এই ইমপ্রোভ হয়েছে আমার। কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়, কীভাবে কমিউনিকেট করতে হয়, কোপ-আপ করতে হয়, সেগুলো শিখেছি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

আপনার স্বপ্নে কথা জানতে চাই। কি ভাবছেন ভবিষ্যৎ নিয়ে?

আফরিন মৌ রিমু: কলেজ পাস করার পর থেকে আজকে পর্যন্ত ঘরের বাইরে থাকছি। তাই ভাবছি, আপাতত স্নাতক শেষ করে কিছুদিন পরিবারের সঙ্গে থাকব। এরপর স্নাতকোত্তর করার প্রস্তুতি নিব। তবে অবশ্যই ভালো কিছু করার চেষ্টা আছে আমার। নিজেকে স্বাবলম্বী নারী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এইউডব্লিউতে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছু চলতে থাকে। এগুলো কোনো কাজে লাগে কি?

আফরিন মৌ রিমু: নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন ক্লাব অ্যাকটিভিটিস, অ্যাসাইনমেন্ট ম্যানেজ করতে হয়। প্রথমে এগুলো ম্যানেজ করতে পারিনি। তবে এখন আমি ম্যানেজ করতে শিখে গেছি। একটু কঠিন হলেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করা উচিত। কারণ নিজেকে তৈরি করতে ক্লাব অ্যাকটিভিটিস খুবই জরুরি। তা ছাড়া নিজেকে ভালো কাজে ব্যস্ত রাখা খুবই জরুরি। আমি মনে করি, নিজের দক্ষতা ও সময় ব্যবস্থাপনা শেখার জন্য এবং নিজের ইমপ্রোভমেন্টের জন্য এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসে যুক্ত থাকা জরুরি।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

আফরিন মৌ রিমু: প্রথমেই বলব, মনোবল শক্ত রাখতে হবে। আসলে সময়ে সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যায়। চেষ্টা করতে হবে, নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে। এইউডব্লিউতে অনেক ধরনের সুবিধা আছে, সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। কোনো সমস্যা হলে সিনিয়র এবং প্রফেসরদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। রুমমেট বিদেশি হওয়ায় আমি প্রথমে তেমন কথা বলতাম না। কিন্তু পরে ঠিক হয়ে গেছে। আসলে এটা হয়ে যায়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট:

ভালো করে পড়াশোনা করতে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?

আফরিন মৌ রিমু: নিজেকে বদলাতে হলে পড়াশোনা জরুরি। ভালো করে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি সময় ব্যবস্থাপনা শিখতে হবে। দিনের কাজ দিনে শেষ করতে হবে। যেকোনো পরামর্শের জন্য আমরাসহ প্রফেসরদের সঙ্গে শেয়ার করা ‍উচিত। কারণ আলোচনা করলে যেকোনো সমস্যার সমাধান বের হয়ে যায়।