আছেন ইশিতা কেমন আছেন আপনি?
ঈশিতা গোয়ালা: নমস্কার, ভালো আছি।
আপনার ছোটবেলার গল্পটা জানতে চাই। কেমন ছিল আপনার ছোটবেলা?
ঈশিতা গোয়ালা: ছোটবেলা যদি বলি তাহলে, প্রথম আমি পড়াশোনা শুরু করি তখন আমার মা খুবই স্ট্রিক্ট ছিলেন পড়াশোনা নিয়ে। আমি তো প্রথম সন্তানতো, উনাদের এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি ছিল। আর আমার বাবা আমার সব সময় চাইতেন যে, আমি এ রকম কোনো কিছু করি যাতে শুধু আমার নয়, আমার বংশের জন্য প্রাউড কিছু করতে পারি। আমি প্রথম পড়াশোনা শুরু করি প্রাইমারি স্কুলে। যদিও সেখানে আমি কনটিনিউ করতে পারিনি। কিন্তু তারপর আমি ব্র্যাক স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে আমি পাঁচ বছর আমার প্রাইমারি কমপ্লিট করি। তারপর যাই এনআর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে আমি ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা কমপ্লিট করি। তারপর শ্রীমঙ্গল গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করি। রেজাল্ট দেওয়ার পর আমি জানতে পারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি নিয়ে। আমার একটা ফ্রেন্ড থেকে সবকিছু জানতে পারি। পরে এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করি। পরীক্ষা দিই, চা-বাগান কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাই।
চা-বাগান থেকে কলেজ পার হয়ে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত যাওয়াটা আপনার জন্য কতটা কঠিন নাকি সহজই ছিল?
ঈশিতা গোয়ালা: আমি যদি বলি পারিবারিক এক্সপেক্টেশন তাহলে বলব, আমার জন্য সেরকম কঠিন ছিল না কিন্তু আশপাশের প্রতিবেশীরা নানা কথা বলত। বাইরে গিয়ে মেয়ে মানুষ কীভাবে পড়াশোনা করবে। এত পড়েই কি হবে। বিয়ে দিয়ে দাও. . ইত্যাদি বলত। তবে পরিবার সব সময় আমি সাপোর্ট পেয়েছি। কারণ আমার বাবা সব সময় চাইতেন আমি ভালো কিছু করি। সে জন্য যতই প্রবলেম হোক ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস বা যেকোনো কিছু হোক আমার বাবা সব সময় সাপোর্ট করেছে। আমার মা সব সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পারিবারিক দিক দিয়ে কখনো আমার প্রবলেম হয়নি।
ইউনিভার্সিটিতে যখন ভর্তি হলেন, ক্যাম্পাসে আসলেন—অনুভূতিটা কেমন ছিল?
ঈশিতা গোয়ালা: আমাদের প্রথম সেমিস্টার ছিল অনলাইনে। তো সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে আমি ফ্লুয়েন্টলি কথা বলতে পারতাম। আমার ইংলিশের ব্যাকগ্রাউন্ড একটু ভালো। তো আমি অনেক মোটামুটি ভালোভাবেই কথা বলতে পারতাম। তারপর একটা সেমিস্টার করার পর আর একটু বেশি ভালো হলাম। তারপর এখানে যখন আসি তখন যখন আমার রুমমেট ছিল বাংলাদেশি। সেটা নিয়ে আমার কোন প্রবলেম হলো না। অনলাইন ক্লাসে অনেক প্রশ্ন করতাম। কিন্তু যখন অফলাইনে শুরু হলো তখন আমি অনেকটা চুপচাপ থাকি। কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। কনফিডেন্স লেভেলটা একটু নিচে নেমে গেছে। তারপর আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে যারা বাইরের দেশের, ওদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঠিকঠাক হয়েছে। এখন আমি অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।
ক্লাস হচ্ছে, টার্ম পেপার জমা দিতে হচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হচ্ছে। কোন একটা ক্লাবের প্রোগ্রাম আছে। সবগুলো একসঙ্গে হয়। টাইম ম্যানেজ করেন কি করে?
ঈশিতা গোয়ালা: ক্লাস করি, ক্লাসের পর যদি কোন ক্লাবের কাজ থাকে বা অন্যান্য কোন কাজ থাকে তাহলে আমরা সেটা করি। আর অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যদি বলি, আমাদের বেশির ভাগ অ্যাসাইনমেন্ট ১২টার আগে জমা দিতে হয়। তারপর আমাদের এক্সট্রা কোন পড়াশোনা বা অন্যান্য সাবজেক্ট পড়াশোনা শুরু করি। প্রায়োরিটি বেসিসে কাজগুলোকে করতে থাকি। কোনো সমস্যা হয় না।
ঈশিতা এইউডব্লিউতে আসার আগে ও পরে নিজেকে ১০ এ কত নম্বর দেবে?
ঈশিতা গোয়ালা: স্পেসিফিকেলি আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। আমি যখন বাগানে ছিলাম তখন মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম না, ইনট্রোভার্ট ছিলাম। কথা বলতে পছন্দ করতাম না, আমি শুধু বাসায় থাকতাম। আমি কোথায়ও যেতাম না। এখন আমি সবার সঙ্গে কনফিডেন্টলি কথা বলতে পারি। সুতরাং এইউডব্লিউতে আসার আগে আমি আমাকে ১০-এ ৪ দেব। আর এখন আমি নিজেকে ১০-এ ৮ কিংবা ৯ দেব।
ভীষণ ভালো। আপনি স্নাতক শেষে বিসিএস কর্মকর্তা হতে চান। এই লক্ষ্যটা নির্ধারণ করলেন কিভাবে? কি কি কারণে?
ঈশিতা গোয়ালা: আমি পিপিই নিয়ে পড়ছি। পিপিই হলে পলিটিকস, ফিলোসফি অ্যান্ড ইকোনমিকস। বিসিএস নিয়ে আমার আগ্রহটা হলো যে, আমি আমাদের চা-বাগানের মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই। চা-বাগানে মানুষ অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। আমি চাই এ রকম কোন কিছু হব যেটা আমাদের চা-বাগানের মানুষদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সহযোগিতা করবে। সরকারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতাগুলো আছে সেগুলো যাতে ঠিকভাবে বাগানের মানুষ পায়—সে জন্য কাজ করতে চাই। আর এ জন্য বিসিএস কর্মকর্তা হতে চাই।
আপনি বলছিলেন যে বাবা মা আপনাকে ভীষণ রকমের সাপোর্ট করেছেন। যার জন্য বাইরের প্রতিকূলতাগুলোকে কঠিন মনে হয়নি। এখন আপনি অন্যতম একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করছেন। তাদের ভালো লাগার কথা কিংবা তাদের স্বপ্নের কথা কিছু বলেন?
ঈশিতা গোয়ালা: হ্যাঁ, আমার মা-বাবা অনেক বেশি প্রাউড ফিল করে আমাকে নিয়ে। আমি শুধু আমাদের পরিবারের না আমি আমার বংশের প্রথম মেয়ে যে ইউনিভার্সিটিটা আসতে পেরেছি। এটা নিয়ে বাইরের মানুষ কথাবার্তা বলে, সেটা নিয়ে আমার বাবা অনেক বেশি গর্বিত। পড়াশোনার বেশি চাপ থাকলে অনেক সময় বলি, আমাকে দিয়ে হয়তো হবে না। তখন বাবা বলেন, তোমার আশপাশের মানুষ তোমার নিয়ে কত স্বপ্ন দেখে। তুমি যদি এ রকম বলো তাহলে আমাদের এত বড় স্বপ্ন তো স্বপ্নই থেকে যাবে। একমাত্র তুমিই বাগান থেকে গেছ এবং আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে।
আপনি আরও অনেক সফল হন। আপনি আরও অনেক আত্মবিশ্বাসী হন এবং আপনার স্বপ্নটা পূরণ হোক। নতুন অদ্বিতীয়াদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?
ঈশিতা গোয়ালা: প্রথমেই বলব টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট ছাড়া কিছুই এখানে সম্ভব না। এখানে সবার কাছেই ২৪ ঘণ্টা সময় থাকে। কিন্তু এটাকে কিভাবে ম্যানেজ করবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে। সবাইকে আমি এটাই বলব যে, টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে খুবই কনসার্ন হতে হবে। কারণ একাডেমিক পড়াশোনা ও ক্লাব অ্যাক্টিভিটি সবকিছু মেটার করে। টাইম যদি ভালোভাবে ম্যানেজ করতে পারো তাহলে সবকিছুই সম্ভব। আর সেকেন্ডলি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। এ রকম অনেক মেয়ে আছে যারা শুধু আত্মবিশ্বাসী না থাকার কারণে ইউনিভার্সিটি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তো কনফিডেন্ট থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি কনফিডেন্ট থাকে তাহলে অনেক বড় বড় সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা যায়।
অনেক ধন্যবাদ ইশিতা আপনাকে। অনুষ্ঠান শেষ করবার আগে আপনাকে একটু জানিয়ে দিতে চাই আপনার বাবা-মা আপনাকে নিয়ে যতটা গর্ববোধ করেন, আমরাও কিন্তু আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। কারণ আপনি আমাদের এই পরিবারের একটা অংশ এবং আপনি আমাদের অদ্বিতীয়া। আপনাকে নিয়েও আমাদের সে একই স্বপ্ন, যে স্বপ্ন আপনার বাবা-মা আপনাকে নিয়ে দেখছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
ঈশিতা গোয়ালা: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।