ফারজানা আক্তার রিপা পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। বাবার একার আয়ে সংসার চলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তার ওপর দুই বছর কোনো বেতন পাননি। এমতাবস্থায় মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়াটা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন স্থপতি ইকবাল হাবীবের সহযোগিতায় ফারজানার পড়াশোনা অব্যাহত থাকে।
স্নাতকে পর্যায়ে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) ভর্তির সুযোগ পান ফারজানা। একই সঙ্গে আবেদন করেন আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তির জন্য। পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে ২০১৭ সালে পেয়ে যান ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি। এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এই বছর অর্থনীতিতে স্নাতক পর্যায় শেষ করেন। ফারজানা এখন স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হওয়ার। পোশাক খাতে নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে চান তিনি।
ফারজানা জানালেন, ‘মেয়েদের অনেক বাধা থাকে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাবা তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা বুঝতে দেয়নি। বাবা একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কিন্তু ২ বছর কোনো বেতন দেয়নি। তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। পরিবারের অবস্থা এমন হয়—খাব নাকি পড়ব! ঠিক সেই সময়টাতে পাশে দাঁড়ান প্রতিবেশী স্থপতি ইকবাল হাবীব। পড়াশোনার আগ্রহের কথা জানতে পেরে তিনি এগিয়ে আসেন। পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার খরচ বহন করেন তিনি।’
এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেন ফারজানা কিন্তু হয়নি। তখন অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন। ঠিক সেই সময়টাতে এইউডব্লিউর বিষয়ে জানেন। কিন্তু সেখানে পড়তে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। সেটা তার পরিবারের পক্ষে অকল্পনীয়। তারপরও বৃত্তির পাওয়ার ভরসায় পরীক্ষা দেন। টিকেও যান। একই সঙ্গে পেয়ে যান অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তিও। তখন অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তখন মনে হয়েছে, আমার জন্য ভালো কিছু ছিল বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি—জানালেন ফারজানা।
বর্তমান অদ্বিতীয়াদের উদ্দেশে ফারজানা বলেন, ‘আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সবার আগে নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মুখস্থ বিদ্যায় নয়, নিজের ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতে হবে। বাধা অতিক্রম করতে মনোবল শক্ত রাখতে হবে। তবেই সফল হবে।’