নিঃসন্দেহে আমার কাজ করার দক্ষতা তৈরি হচ্ছে

প্রিয়াংকা গোয়ালা।২০২০ সালের অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী।

পরিবারের প্রথম নারী, অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে যিনি প্রতিকূলতা জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছেন, তিনি আমাদের অদ্বিতীয়া। ২০২০ সালে এই শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া ১০ জনের সবাই মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার চা-শ্রমিকের সন্তান। তাঁদেরই একজন প্রিয়াংকা গোয়ালা। ছোটবেলাতেই বুঝে নিয়েছিল, নিজের পায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে চাইলে নিজেকে আরও যুদ্ধ করতে হবে। নবম শ্রেণি থেকে টিউশনি শুরু করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন প্রিয়াংকা। কলেজে থাকাকালীন হঠাৎ একদিন বিয়ের প্রস্তাব এলো। সেই বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও ফেরাতে পারেননি আশেপাশের আক্রোশ। এক বান্ধবীর কাছ থেকে প্রথম এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের কথা শোনেন। নিজেই উদ্যোগী হয়ে আবেদনপত্র পূরণ করেন, ভর্তি পরীক্ষা দিলেন এবং ভর্তির সুযোগও  পেলেন। সেই সঙ্গে পেয়ে যান আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্ট ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো পরিবারের প্রথম নারী, যাঁরা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারছেন না, তাঁদের অনুপ্রাণিত করার জন্য ২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয় ‘অদ্বিতীয়া’ নামে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রিয়াংকা। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে যেহেতু বিশ্বের ১৯টি দেশের নারী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। শিক্ষকমণ্ডলীর একটা বড় অংশও দেশের বাইরের। শুরুতে বেশ হোঁচট খেতে হতো প্রিয়াঙ্কার পরিবেশের সঙ্গে মান্যে নিতে। ধীরে ধীরে এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। হয়েছেন আত্মবিশ্বাসী। বর্তমানে ইউজি-১ লেভেলের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রমের সাথেও নিজেকে যুক্ত করেছেন। রাইজিং ইউজি-২ লেভেলের পাবলিক হেলথ বিভাগের মেন্টাল হেলথ  এন্ড ওয়েলবিং সেশন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ই-ক্যারিয়ার মেলাতেও ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। প্রিয়াংকার কাছে জানতে চাইলে প্রিয়াংকা জানান, 'বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকায় আমার ভেতরে ব্যবস্থাপনার গুনাগুণ , দলীয়ভাবে কাজ করার মানসিকতা   তৈরি হচ্ছে। আমি জানতে পারছি, একটা কাজ করতে গেলে কোন কোন বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা উচিৎ। নিঃসন্দেহে আমার কাজ করার  দক্ষতা তৈরি হচ্ছে। আমার ভাষার দক্ষতা বেড়েছে।  ১৯টি দেশের মেয়েদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে শিখছি। আশাকরি সামনের দিনে যখন নিজে কোন পেশায় যুক্ত হবো তখন এই গুণগুলো আমাকে সাহায্য করবে। আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে হয়তো এতো ভালো সুযোগ আমই পেতাম না।'