জনস্বাস্থ্যে স্নাতক সম্পন্ন করলেন চা-বাগানের তমা
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের আলীনগর চা-বাগানের মেয়ে তমা বর্মা। বেড়ে ওঠেছেন চা-বাগানেই। তাঁর বাবা জয়ন্ত বর্মা চা শ্রমিক। দিনভর খেটে তিনি পেতেন একশত টাকা (বর্তমানে ১৭০ টাকা হয়েছে)। এত অল্প টাকায় পরিবারের পাঁচজনের খাবার জোগাড় করা যেখানে কঠিন, সেখানে পড়াশোনা করতে চাওয়াটা বিলাসিতা। তবুও মেয়ের অদম্য ইচ্ছে দেখে বাধা হয়ে দাঁড়াননি মা-বাবা। তমা নিজেও চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পড়াশোনার খরচ চালাতে অষ্টম শ্রেণি থেকে টিউশনি শুরু করেছেন। এভাবে নিজের চেষ্টায় এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) জনস্বাস্থ্য বিভাগে ভর্তি হন।
২০১৯ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান তিনি। চলতি বছরের মে মাসে জনস্বাস্থ্য বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শেষ করেছেন। এখন স্নাতকোত্তর ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
চা-বাগান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানো তমার জন্য সহজ ছিল না। এ ব্যাপারে তমা জানান, ‘আমি ছোট থেকেই বাবা-মায়ের সাপোর্ট পেয়েছি। এইচএসসির পর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এইউডব্লিউ সম্পর্কে জানতে পারি। তারপর শ্রীমঙ্গলে গিয়ে ফরম পূরণ করি। শ্রীমঙ্গলেই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভায় ডাক পাই। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে বৃত্তি পেয়ে ভর্তি সুযোগ পাই। শুরু হয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পথ চলা।’ পরক্ষণেই তমা বললেন,‘এইউডব্লিউতে আসার আগে আমার কনফিডেন্ট লেভেল ছিল শূন্য। এখন আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমি অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি করেছি। সেই তমা আর এখনকার তমার আকাশ-পাতাল পার্থক্য।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তমা বলেন, ‘আমার বাবা চা-শ্রমিক। ১৭০ টাকা মজুরি পান। এটা দিয়ে সব চালানো কঠিন। তাই যতদ্রুত সম্ভব চাকরি করে পরিবারে সাপোর্ট করব। এ ছাড়া চা-বাগানে শিক্ষার অভাব আছে। এখানে কুসংস্কারে ভরপুর। তাই তাদের সচেতন করা সহ জীবনযাত্রার মান বাড়াতে কাজ করতে চাই। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করছে। আমার ইচ্ছা আছে, আরও উচ্চতর পড়াশোনা করে বাগানের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার।’