মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ ও গবেষণা করে নিজ কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে চান লক্ষী মনি
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত একটা গ্রামে লক্ষী মনি কুর্মীর বাড়ী। বাবা কৃষি কাজ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। এখন বড় দুই ভাই কৃষি কাজ করেন। ছোট দুই বোনের মধ্যে লক্ষী সবার ছোট। বড় বোন এইচএসসি পাসের পর বিয়ে হয়ে যায়। লক্ষীই পরিবারের একমাত্র স্নাতক পর্যায়ে যেতে পেরেছেন। লক্ষী স্বপ্ন দেখেন, গ্রামাঞ্চলের নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার।
২০১৭ সাল। সবে এইচএসসি পাস করা লক্ষী মনি কুর্মী স্বপ্ন দেখছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। কিন্তু ভর্তির আবেদন ফরম কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না। ঘরে বসে কান্নাকাটি করে দিন কাটছিল তাঁর। মেয়ের কান্না দেখে স্থানীয় একটি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন বাবা রতন কুর্মী। সেখানে পড়তে পড়তে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের মাধ্যমে লক্ষী মনি জানতে পারেন এইউডব্লিউ সম্পর্কে। অবশেষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর, এখন দৃষ্টি আরও দূরে।
তিনি ২০১৯ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান। এখন পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) জনস্বাস্থ্য বিভাগে। আর্থিক ও পারিপার্শ্বিক নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে কীভাবে উচ্চশিক্ষার পথে পা বাড়ালেন, সেই গল্প ওঠে এল ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ 'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে।
মৌলভীবাজারের মেয়ে চট্টগ্রামে কীভাবে আসল—এই গল্পটা শুনতে চাইলে লক্ষী জানালেন, ‘আমি মৌলভীবাজারের জুড়ী থেকে এসেছি, এটা একটা প্রত্যন্ত এলাকা। এখানে তথ্য পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। এইউডব্লিউর কথা জানতে পারি এক আত্মীয়র কাছ থেকে। আমার গ্রামটা অনেক দরিদ্র পীড়িত এলাকা। তবে পরিবার পড়াশোনাকে সাপোর্ট করেছে। যা হোক আবেদন করি এবং পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই এইউডব্লিউতে। এখানে এসে প্রথমে যেটা হয়েছে, আমি বাংলা মাধ্যমের হওয়ার কারণে ভাষাগত সমস্যায় পড়েছি। বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যা হয়েছে। তবে পরিবেশটা অনেক বন্ধসুলভ হওয়ায় ২-৩ মাসের মধ্যেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ডর্মে রুমমেট ছিল বিদেশি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয়েছে, যেটা অনেক হেল্প করেছে। তা ছাড়া ইনস্ট্রাক্টর ও প্রফেসরগণ অনেক হেল্পফুলে এখানে।’
এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির ব্যাপারে লক্ষী বলেন, ‘বিভিন্ন ক্লাবে যুক্ত হতাম, কাজ করতাম। এইউডব্লিউতে ওয়ার্ক স্টাডির ব্যবস্থা আছে। এগুলোতে কাজ করেছি। প্রফেশনাল দক্ষতা এখান থেকে অর্জন করেছি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? এর উত্তরে লক্ষী বলেন, ‘স্নাতক শেষ করে মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করব, গবেষণা করব। এর মাধ্যমে আমার কমিউনিটিকে সহযোগিতা করব।’
নতুন অদ্বিতীয়া যারা আছে তাদের জন্য লক্ষীর পরামর্শ হলো, আমি আমার সিনিয়রদের থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। নতুনরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমিও সহযোগিতা করব। এখানে এসে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে—পড়াশোনা ভালো করে করতে হবে। মনোবল ধরে রাখতে হবে। শ্রেণিকক্ষে ইনস্ট্রাক্টর বা প্রফেসরগণ অনেক ফ্রেন্ডলি। তাঁদের কাছ থেকে যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া যায়। তাই যেকোনো প্রয়োজনে পরামর্শ করতে ভুলবে না। এর বাইরে আরেকটা কথা বলতে চাই, সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। এইউডব্লিউ অনেক সুযোগ দেয়, সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে।’
অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।