‘উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে আরও ভালো কিছু করব’

নাফিসা তুনাজ্জিন বর্তমানে সিটিব্যাংক এন.এ'তে কাজ করছেন। এখানে তিনি ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট অপারেশন বিভাগে ফান্ড ট্রান্সফার ইউনিটের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। নাফিসার এই সাফল্যের কথা ওঠে আসে ২৯ জুলাই ২০২১ বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে। নাফিসা ২০১৫ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ) এবং প্রথম আলো ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পান। শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষ করেছেন ২০১৯ সালে।

এই পথ চলার শুরুটা কিভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে নাফিসা জানান, ‘আমার এই পথ চলাটা শুরু হয় এইউডব্লিউতে ভর্তি হওয়ার পর। ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারি আমি ‘ফার্স্ট ফিমেল ইন দ্য ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ এর জন্য নির্বাচিত হয়েছি। এই বৃত্তি আমার পড়াশোনায় সহযোগিতা করেছে। ২০১৯ সালে স্নাতক শেষ করে দেশের বাইরে পাঠানো হয় ইন্টার্নশীপ করতে। সেখানে ইন্টার্নশীপ শেষ করে এসে এই ব্যাংকে জয়েন করি।’

এইউডব্লিউ’র পড়াশোনার প্যাটার্ন আমাদের দেশের গতানুগতিক ধারা থেকে আলাদা। আপনি কি বাংলা মাধ্যম নাকি ইংরেজি মাধ্যম থেকে গেছেন জানাতে চাইলে বলেন, ‘ আমি সম্পূর্ণ বাংলা মাধ্যম থেকে গিয়েছি। পরে ইংলিশ মাধ্যমে পড়াশোনা সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে আমাকে। ওখানে সব সময় গ্রুপ-ওয়ার্ক এর প্রতি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই গ্রুপ-ওয়ার্কেরর মাধ্যমে সাইকে গ্রোম করা হয়। সবাইকে একটা কমন প্লাটফর্ম দাঁড় করানোর জন্য সব বিষয়ে পড়তে হয় সবাইকে । যেমন আমি অর্থনীতিতে পড়েছি কিন্তু আমাকে দর্শণ, ইতিহাস, লিডারশিপ ইত্যাদি নানা বিষয়ে পড়াশোনা করানো হয়েছে। এর ফলটা আমরা বাইরে এসে বুঝতে পারি, তফাৎটা বুঝতে পারি। সকল দেশের পড়াশোনার ধরন এক নয়। তাই সবার বেসিক লেভেল যাতে এক হয় সেজন্য এই চেষ্টা করা হয়।’

বাইরে ইন্টার্নশিপ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নাফিসা জানান, ‘অভিজ্ঞতা ভালোই ছিল। নতুন কিছু শিখতে পেরেছি। নতুন জ্ঞান, ধ্যান-ধারণার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। ওখানে আমার ইন্টার্নশিপ করেছি একটি ব্যাংকে। যেহেতু আমি এখন ব্যাংকে জব করি তাই অনেক হেল্প করছে । কিভাবে নিজের মতামত দিতে হবে, নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হবে তা শিখেছি, যা এখন কাজে লাগছে।’

কি স্বপ্ন দেখেন নাফিসা? এ ক্ষেত্রে তিনি জানান, ‘ আমার উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার ইচ্ছা আছে । যদিও প্যানডেমিকের কারণে অনেক কিছুই থেমে আছে। সব ঠিক হলে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করব ‘

পড়াশোনা করার সময় যে প্রবলেমগুলো ছিল তা কিভাবে ওভারকাম করেছেন,, এ ক্ষেত্রে তিনি জানান, ‘আমাদের ডর্মেটরীতে থাকা ম্যান্ডেটরি ছিল। তাই গ্রুপে কাজ করে সবাই আমাদের প্রবলেম সলভ করেছি। এটা অনেক সহজ হয়েছে আমাদের জন্য। ভালো করে পড়াশোনা করে ডিগ্রীটা নিতে হবে, এই মনোবল থেকে নিজেকে শক্ত রেখে চাপের সময়গুলো পার করেছি।’

নতুনদের জন্য পরামর্শ কি জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এখন প্যানডেমিকের কারণে ভার্সিটি বন্ধ। তাই সবকিছু অনলাইনে করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমি নতুনদের জন্য বলব, যেহেতু পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে সেই ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস এর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। অনলাইনে সবই এগুলো পাওয়া যায়। যার যেটা ভালো লাগে সে সেটা করলে সময়টা প্রোপার ইউজ হবে। আর আমার জুনিয়র অদ্বিতীয়াদের জন্য পরামর্শ হলো, স্নাতক শেষ করে বের হওয়ার পর মাস্টার্স করার আগেই একটা চাকরির অভিজ্ঞতা নেওয়া উচিত। এই অভিজ্ঞতাটা থাকলে অনেক কিছু বুঝা যায়। স্নাতক শেষ করে বের হওয়ার পর দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা কতটুকু ফিট, সেটা বুঝা যায়। পরে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়। সেই সেঙ্গে দেশে বা বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করতে হবে।’

২০১২ সাল থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং প্রথম আলো ফার্স্ট ফিমেল ইন দা ফ্যামিলি স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড নামে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। প্রতিবছর পরিবারের প্রথম নারী অথচ দরিদ্র, যিনি উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ গঠনে আগ্রহী, এ রকম ১০ জনকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহায়তায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ট্রান্সকমের সহায়তায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪২ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড এই শিক্ষাবৃত্তির দায়িত্ব নেয়। নামকরণ করা হয়েছে অদ্বিতীয়া। আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় ৩৬ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জন শিক্ষার্থী এই বৃত্তি পেয়েছেন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনও তাঁদের আবাসন, টিউশন ফি সুবিধাসহ নানা সুযোগ দেয়।

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।