‘সন্তানের কোনো সমস্যা হলে তারা যেন বাবা-মাকে খুলে বলতে পারে’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান।

যারা মাদক গ্রহণ করেন, তাদের হতাশা থাকে, ক্ষোভ থাকে । পরিবারের সদস্যরা তাদের বিশ্বাস করে না। মাদকে পুনরাসক্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের কাজে পরিবার সমর্থন করে না । মাদকাসক্তি একটি ব্যাধি । মাদকাসক্তি ব্রেনের রোগ। মাদকাসক্তি প্রতিরোধ এর চিকিৎসা রয়েছে । মনোরোগ চিকিৎসক তাকে যথাযথভাবে পরামর্শ দেন। আসক্ত ব্যক্তিকে সচেতন করতে পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। ফ্যামিলি কাউন্সেলিং দরকার । ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির পুনরাসক্তির সময়, স্থান, ব্যক্তির ভূমিকা রয়েছে। যে সময়ে, যে ব্যক্তির সঙ্গে মাদক গ্রহণ করতেন। সেই সময়ে বা সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলে আবার মাদক গ্রহণের ইচ্ছা জাগতে পারে। অথবা যে স্থানে বসে মাদক গ্রহণ করতেন । সেই সব ব্যক্তি, স্থান, সময় এড়িয়ে চলতে হবে । পরিবারের সদস্যদের প্রতি বোঝাপড়া থাকা দরকার। এমনটাই জানালেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান ।

গত ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে আধা ঘণ্টা প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী সহায়তা সভার এটি ছিল ১৫৫তম আয়োজন। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা।

প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী সহায়তা সভার এটি ছিল ১৫৫তম আয়োজন। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা।

কোনো ব্যক্তি আসক্ত হলে তার পরিবার অনেক দেরিতে জানতে পারেন। পরিবারের সদস্যরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন তার আচার ব্যবহার ব্যাপক পরিবর্তন। হঠাৎ করে রেগে যাচ্ছে, টাকা পয়সা দাবি করছে, রাত জেগে থাকছে, দিনে ঘুমাচ্ছে । স্কুল কলেজে অনিয়মিত । বাসায় ঝামেলা করছে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে ধরে নেওয়া যায় তিনি আসক্ত, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি তিনি অস্বীকার করেন তাহলে ডোপ টেস্ট করা যায়। যদি সে বলে মাদক নেয় না। তখন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি করান যেতে পারে। আসক্ত ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধেও চিকিৎসা সেবা নেওয়া যায় সে যেন দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিভাগ সহ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয় মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা করা সম্ভব।

ধূমপানে থাকে নিকোটিন । নিকোটিন ও মাদক । মাদক ছাড়ার জন্য সবচেয়ে দরকার মানসিক ইচ্ছাশক্তি। প্রথম দিকেই দুই তিন দিন হয়তো সমস্যা থাকবে পরবর্তী তা কেটে যাবে। তাই কালকে থেকে নয় আজ এখন থেকেই ধূমপান ছাড়া সম্ভব। প্রয়োজন নিজের ইচ্ছেশক্তি। সে ক্ষেত্রে যদি কোন সমস্যা দেখা যায় সে ক্ষেত্রে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

যারা মাদক আসক্ত নয় প্রথমত তাদের সচেতন করতে হবে। মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের ফলে তরুণরা জানতে পারে মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে। যারা মাদক আসক্ত নয় তাদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলনের ফলেই সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব।

সন্তানের কোনো সমস্যা হলে তারা যেন সবকিছু বাবা মাকে খুলে বলতে পারে। সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সন্তানদের পাশে থাকা, তাদের কথা শোনা, সহমর্মিতা থাকতে হবে।

পরিবারে বাবা মাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে তাদের ছেলেমেয়েদের। সন্তানের কোনো সমস্যা হলে তারা যেন সবকিছু বাবা মাকে খুলে বলতে পারে। সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সন্তানদের পাশে থাকা, তাদের কথা শোনা, সহমর্মিতা থাকতে হবে।

সন্তানদের স্বাধীনতা যেমন থাকবে আবার তাদের প্রতি শাসনও থাকবে। পরিবারের দায়িত্ব সন্তানের পাশে থাকতে হবে। তারা কোনো সংকটে পড়লে তাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। সন্তান যদি কোন কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে লোকলজ্জার ভয়ে তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে । সন্তানকে সুস্থ বিনোদন দিতে হবে। পরিবারের আস্থার জায়গা গুলো ফিরিয়ে আনতে হবে।