মাদকাসক্তের সু্স্থতায় পাশে থাকার আহ্বান
চিকিৎসকেরা পরামর্শমূলক কথা বলছিলেন, কেউ কেউ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করছিলেন। সে সময় পাশেই বসা একজনকে ক্ষণে ক্ষণে ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। সদ্য প্রয়াত গীতিকার ও জ্যোতিষী কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ‘যেখানে সীমান্ত তোমার. . .’ গানটি যখন একজন পরিবেশ করেন, পাশে বসা সেই নারী এবার ঝরঝর করে কাঁদেন।
গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা অনুষ্ঠান হয়। সেখানে কথা হয় ওই নারীর সঙ্গে। আদরের ছোট ভাই মাদকাসক্ত। ভাইয়ের জন্যই তিনি দুই বছর আগে একটি পরামর্শ সভায় এসেছিলেন। কয়েকবার ভাইয়ের চিকিৎসাও করিয়েছেন, তবে পুরোপুরি ছেড়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। অন্যদিকে নিজের ছেলের মধ্যেও তিনি কিছু ভিন্ন আচরণ টের পাচ্ছেন। ছেলের কথা বলতে গিয়ে আবার কাঁদেন।
পরিবারের আপনজনদের কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, সে পরামর্শ জানতেই এ আয়োজনে অনেক মা এসেছিলেন। কেউ অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেন, কেউ নীরবে চোখের পানি ফেলেন।
আয়োজনে শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের সদস্য আনিসুল হক বলেন, সচেতনতা ছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব কঠিন। এই সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি মাদকের সহজলভ্যতা বন্ধের জন্য নীতিনির্ধারকদের চাপ দিতে হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, কিশোর–তরুণদের খেলাধুলা, বই পড়াসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত রাখা গেলে তাদের মাদক গ্রহণের সম্ভাবনা কম। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, যে মাদক বাংলাদেশে গ্রহণ করা হয়, সেখানে শুধু মাদক হিসেবেই যে তা ক্ষতি করে, তা নয়। এর সঙ্গে আরও কিছু উপকরণ যুক্ত করা হয়, যা তাৎক্ষণিক মৃত্যুসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে।
মাদকের কারণে মানুষের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতিমা মারিয়া খান বলেন, মাদকের লক্ষ্মণ দেখা দিলে পরিবার এড়িয়ে যেতে চায়। সেটা না করে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
বিএসএমএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আতিকুর রহমান বলেন, মাদক থেকে ফিরে আসার জন্য ব্যক্তির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান পরিবারের সদস্যদের হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানান। মাদক ছাড়ার জন্য নিজ উদ্যোগের ওপর জোর দেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এস এম মোরশেদ।
মাদক থেকে কীভাবে সুস্থ জীবন যাপন করছেন, তা নিয়ে ‘আধার শেষে আলো’ নামে একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক দর্শক গান শোনান।
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর মাদকবিরোধী আন্দোলনের পরামর্শ সহায়তা কার্যক্রম সশরীর বন্ধ ছিল। প্রথম আলো ট্রাস্টের নির্বাহী মাহবুবা সুলতানা সঞ্চালকের বক্তব্যে সে কথা স্মরণ করে বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে এখন থেকে নিয়মিত সশরীর পরামর্শ সহায়তা কার্যক্রম চালু থাকবে।