বিয়ের পর থেকেই পজিটিভ প্যারেন্টিং চর্চা করা উচিত

বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন।

প্যারেন্টিং হলো সন্তান লালন-পালন। প্যারেন্টিং বাবা মায়ের প্রেগনেন্সির থেকেই শুরু হয়। এটা শিখতে হয়। কয়েক রকম ( যেমন স্বৈরাচারী, কর্তৃত্বপূর্ণ, সহনশীল) প্যারেন্টিং দেখা যায়। বাবা মায়ের সম্পর্ক সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব পালন করা। সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলা । অর্থাৎ বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সু-সম্পর্ক থাকে। বাবা-মা সন্তানকে যা বলবে তাই শুনতে হবে। ‘না’ বলাটা কোন কোন বাবা মা শুনতে চায় না। খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে তাঁরা নজরে এনে বড় করে ধরে। আরেক ধরনের আছে যাদের বাসায় কোনো নিয়ম-কানুন নাই। ছোট বাচ্চাদের বাসায় রেখে বাবা-মা অফিসে চলে যাচ্ছেন। একটু বুঝিয়ে যাওয়া যায়। কিংবা অন্য সময় শিশুকে একটু বেশি সময় দিলেন। আবার দেখা গেল শিশূর দিকে কোন খেয়াল নেই । বাচ্চার জ্বর কেউ খেয়াল করছে না। শিশুর সঙ্গে বাসায় কেউ নেই , একাকিত্ব বোধ করে। সেই সব শিশুরা বাইরের পরিবেশে বন্ধুদের সঙ্গে যখন মিশে তখন তাকে আপন মনে হয়। এ জন্য পজিটিভ প্যারেন্টিং দরকার। সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা হবে নিবিড়। বাবা মায়ের সঙ্গে মিশে যাবে। এটা চর্চার বিষয়। এমনটাই জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন । গত ২৭ এপ্রিল বুধবার বেলা সাড়ে ৩ টা থেকে আধা ঘণ্টা প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠিত হয়।প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী সহায়তা সভার এটি ছিল ১৫৬তম আয়োজন। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা।

পজিটিভ প্যারেন্টিং চর্চাটা কিভাবে শুরু করবেন, কোন বয়স থেকে শুরু হবে এর উত্তরে সুলতানা আলগিন জানালেন, ‘বিয়ের পর থেকে পজিটিভ প্যারেন্টিং চর্চা করা উচিত । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মনোরোগ বিভাগে প্রতি রবিবার সাইকোথেরাপি ট্রেনিং হয়। সেখানে পজিটিভ প্যারেন্টিং ট্রেনিং দেওয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই শুরু করা উচিত বাচ্চাকে কীভাবে সময় দেবেন। নিজের দায়িত্ববোধ, যৌথ পরিবারের ভূমিকা কি, কীভাবে বাচ্চাকে সময় দেওয়া উচিত। বাবা-মা সন্তানকে যথেষ্ট সময় দেওয়া দরকার। বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্কে ঘাটতি থাকলে, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব পালনে ঘাপলা থাকলে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। সবার মধ্যে বন্ধন দরকার। পজিটিভ প্যারেন্টিং আজকাল বেড়েছে। কারও দৈহিক, মানসিক সমস্যা থাকলে , বাচ্চাদের ডিপ্রেশন থাকলে, মানসিক সমস্যা থাকলে লোকজনের মধ্যে মেলামেশায় সমস্যা শুরু হয়। আর সমস্যা শুরু হলেও খান থেকেই পজিটিভ প্যারেন্টিং শিখতে হয়। এটি যেকোন বয়সেই হতে পারে। তখন থেকেই আচরণ, দক্ষতা বাড়াতে হয়।

মাদকাসক্তকে রোগী হিসেবে দেখতে হবে। মাদকাসক্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সঠিক আচরণ করতে হবে

সন্তান মাদকাসক্ত চিকিৎসাকালীন সময়ে অভিভাবকের ভূমিকা রয়েছে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে হবে। চিকিৎসাকালীন সময়ে বাবা-মা বলে বসেন তোমার জন্য এত কষ্ট করি। এভাবে মাদক গ্রহণ করছো। এসব সরাসরি বলা যাবে না । মাদকাসক্তকে রোগী মনে করতে হবে। অন্য যেকোন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হরমোন, প্রেশারের রোগের মত । অন্যান্য রোগ হলে যেমন আমরা গুরুত্ব দেই। সন্তান মাদকাসক্ত হলে গুরুত্ব নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। বন্ধুদের চাপ,মানসিক রোগ ( ফোবিয়া, ডিপ্রেশনে) থাকলে প্রিয়জন মাদকাসক্ত হতে পারে। ফোবিয়া, ডিপ্রেশনে থাকলে হয়তো তখন বন্ধুরা বলে মাদক খাও ভালো লাগবে। এভাবে নেশায় জড়িয়ে পড়ে। আবার কারও সুচীবায়ু রোগ থাকলে, ধর্মের বিরুদ্ধে চিন্তা করে চোখের সামনে খারাপ চিন্তা চলে আসে, ভালোবাসার সম্পর্কে ব্রেকআপ হলে এটা হয়। তাই বাবা মায়ের উচিত হবে কটাক্ষভাবে আচরণ না করে বন্ধুসুলভ আচরণ করা।

মাদকাসক্তকে রোগী হিসেবে দেখতে হবে। মাদকাসক্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সঠিক আচরণ করতে হবে। তাদের আবেগ (ইমোশন) নিয়ে খেলা যাবে না। সন্দেহ করা যাবে না । প্রিয়জন মাদকাসক্ত হলে তারা কোন বন্ধুর সঙ্গে মিশছে, তারা পকেট মানি কী করছে এসব নিয়ে সন্দেহ করে কিছু বলা যাবে না। ইমোশন নিয়ে নয় বরং আচরণ সংশোধন করা। বাবা-মাকে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে । জানতে চাইতে হবে অথবা জানার চেষ্টা করতে হবে, কেন মাদক গ্রহণ করল। সন্তানকে সময় দিতে হবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পারিবারিক নিয়ম থাকবে যেমন খাবার সময়, ঘুমানোর সময়, খেলার সময়, পড়ার সময় । পুরোটাই চর্চার বিষয়। পারিবারিক বন্ধন ঠিক থাকলে সেই সন্তান মাদকাসক্ত হয় না।