প্রিয়জন মাদক গ্রহণ করলে পরিবারের লোকজন বুঝেনা তাদের কোথায় নিতে হবে। সরকারিভাবে নামমাত্র মূল্যে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকার তেজগাঁও কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগ, এছাড়াও সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে মনোরোগ বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন। গত ৩১ জুলাই শনিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শ সভায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা মারিয়া খান এ কথা বলেন। বিকেল চারটা থেকে আধা ঘণ্টা প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা। অনলাইনে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার এটি ছিল ২৪ তম আয়োজন।
করোনাকালে মাদকের প্রকোপ থেমে নেই। অভিভাবক হিসেবে তরুণদের সচেতনতা কিভাবে বাড়াবেন এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. ফাতিমা মারিয়া খান বলেন, ’প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই ভালো। তরুণদের মধ্যে যারা মাদক গ্রহণ করছে তাদের বয়স ১৫থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।পরিবার থেকে সচেতনতা তৈরি করতে হয়। অর্থাৎ মা-বাবা তাদের সন্তানের সঙ্গে মিশে তাদেরকে যদি মাদকের ক্ষতিকারক সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন তাহলে তারা মাদক থেকে দূরে থাকবে। ধরা যাক টিভিতে কোন চ্যানেলে মাদক বিষয়ক অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনেক পরিবারে দেখা যায় বাবা-মা সেই চ্যানেল বদলে অন্য কিছুতে চলে যান। তাদের ধারনা সন্তান মাদক সম্পর্কে জেনে যাবে। যদি এটা আপনার সন্তান বুঝতে পারে আপনি তার থেকে কিছু লুকাচ্ছেন, তবে কোন না কোন উপায়ে সে ওই বিষয়ে জানার চেষ্টা করবে। বরং বাবা মা চা খেতে খেতে মাদকের ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে সন্তানদের মাদকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন। স্মার্ট হওয়ার জন্য বা ফ্যাশন দেখানেোর জন্য মাদক না। মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো ভয়ংকরভাবে না বলে সুন্দরভাবে গল্পের ছলে বোঝাবেন।’
তিনি আরও বলেন,’ মাদক গ্রহণ অল্প দিয়ে শুরু হলেও একসময় মাদক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মাদক গ্রহণে মস্তিষ্কের গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়। সাময়িক আনন্দ ক্ষনিকের জন্য। পরবর্তীতে মাদক সহজে ছাড়তে পারে না। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত মাদকের কারণে ক্ষতি হয়। তরুণ বয়সে চামড়া টানটান ভাব থাকলেও মাদক গ্রহনে তা কুঁচকে যায়, বয়স্ক দেখা যায়। মাদকের ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। নানা জটিল রোগে ভুগে । খাবার এবং ঘুম ঠিকমতো হয় না। ভিটামিনের অভার দেখা যায়। ভুলে যাওয়া রোগ, অ্যালার্জি হতে পারে । ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। মাদকাসক্তি মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয়। ঘুম না হওয়া, টাকাপয়সা চাওয়া এবং যৌন আকাঙ্ক্ষা এই তিনটি লক্ষণ তার মধ্যে বেশি দেখা যায়। পরিবারের সাংস্কৃতিক চর্চা বা ধর্মীয় চর্চার মধ্যে যদি থাকে সেই সন্তান মাদক গ্রহণ করে কম। বাবা-মার সাথে যদি কোন অমিল থাকে ওই পরিবারের সন্তানরা মাদকের প্রতি মনোযোগী হয় । সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, খোঁজ নিতে হবে। সন্তানের সঙ্গে আন্তরিক হতে হবে।’
জনৈক একজন প্রশ্ন করেছেন হেরোইন থেকে ৭৩ দিন মুক্ত আছেন। নেশা মুক্ত থাকতে কি করবেন । এর উত্তরে ডা. ফাতিমা মারিয়া জানালেন, ’আপনি বুঝতে পেরেছেন, মাদক আপনাকে ক্ষতি করছে এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মাদক সহজে ছাড়া যায়না। বায়ো সাইকো সোশ্যাল মডেল দরকার । আপনার কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন, বমি বমি হবে, রেগে যাবেন।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি কমপক্ষে দুই বছর যদি মাদক গ্রহণ না করেন, তবে ধরে নেওয়া যায় তিনি মাদক মুক্ত হয়েছেন। তাদেরকে ৫টি ট্রিগারিং ফ্যাকটর থেকে দুরে থাকতে হবে। তা হলো: ১. মাদক গ্রহনের আগে যেই মোবাইল ব্যবহার করত সেই সিম বদলাতে হবে। ২. যেই স্থানগুলোতে সে মাদক গ্রহণ করত সেইস্থান এড়িয়ে চলা ৩. মাদক ছাড়ার পর কোন বন্ধুর সঙ্গে মিশছেন তা দেখতে হবে। ৪. টাকাপয়সা খরচের ক্ষেত্রে সতকর্তা ৫. যেই সময়গুলোতে সে মাদক গ্রহণ করত সেই সময়ে অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।’
ব্রেনে ভালো লাগাটা দুই বছর থেকে যায়। পাতার বিড়িকে না বলতে শিখতে হবে। বাবা-মাকে শেখাতে হবে। শিক্ষকগণ শেখাতে পারেন। টিনএজ বয়সে ‘না’ বলতে শেখাবেন । যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যেন বাবা মাকে জিজ্ঞেস করতে পারে। বাচ্চা বাবা-মাকে জানাবে সে কোথায় যাবে, সে তার বন্ধুর সঙ্গে কি আলোচনা করেছে, বন্ধু তাকে কি প্রস্তাব দিয়েছে। কথাগুলো বাবা-মাকে খোলামেলা বলতে হবে ।
আজকাল অনলাইনে পার্সেলে মাদক চলে আসছে। সন্তান কি আনছে, কি দেখছে তা নজরদারিতে আনতে হবে। সন্তান বাবা মাকে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। মাদক গ্রহণ না করাই স্মার্টনেস। সবাই মিলে সচেতন হলেই একসময় মাদক পরিবার এবং সমাজ থেকে দূর হবে।