স্মার্টফোনে আসক্তি মাদকাসক্তির ঝুঁকি বাড়ায়?

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ২৯ অক্টোবর ২০২৩, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত (১৬৭তম) অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের বিভাগী প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান ‘স্মার্টফোনে আসক্তি মাদকাসক্তির ঝুঁকি বাড়ায়?’ বিষয়ে আলোচনা করেন।

স্মার্টফোনে আসক্তি প্রসঙ্গে ডা. জিল্লুর রহমান বলেন,স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যদি নির্ভরশীলতা তৈরী হয় তবে একে আমরা আসক্তি বলতে পারি। নিয়মিত মাদক গ্রহনের ফলে অনেকেই মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয় পড়ে। ঠিক তেমনি প্রযুক্তি কিংবা স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারী এর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়লে একে আমরা প্রযুক্তি আসক্তি বলতে পারি।

 প্রযুক্তি আসক্তির লক্ষণগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, যে কোন ব্যাক্তির দৈনন্দিন জীবন যাপনে একটি রুটিন থাকে। যেমন একজন পেশাজীবীকে ঠিক সময়ে অফিস যেতে হয় কিংবা একজন শিক্ষার্থীকে সময় মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করতে হয়। স্মার্টফোনে আসক্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে জীবন–যাপনের প্রত্যাহিক রুটিনে ব্যাঘাত ঘটে। রাত জেগে স্মার্টফোনে ব্যাবহার করলে একজন পেশাজীবী কিংবা শিক্ষার্থী সকালে ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না। এর ফলে সময় মেনে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবে না। প্রতিদিনের আবশ্যিক কাজগুলো ঠিকঠাক সম্পাদন করতে পারবে না; অনিন্দ্রার কারনে দ্রুত শারীরীক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলে কাজে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। আসক্তির ফলে উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে, বন্ধু–বান্ধব, আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে।

ডা. জিল্লুর রহমান খান

 মাদকাসক্তি ও প্রযুক্তি আসক্তির মধ্যে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তিরও দৈনন্দিন জীবনে কোন রুটিন থাকে না, কাজে মনোযোগী হয় না, শারীরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই দিকে থেকে মাদকাসক্তি ও প্রযুক্তি আসক্তির মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে।

প্রযুক্তি আসক্তি প্রসঙ্গে ডা. জিল্লুর রহমান খান বলেন,  বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে প্রিয়জন, বন্ধু–বান্ধবরা মিলিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু নিজদের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে না কারণ প্রত্যেকেই স্মার্টফোন ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আবার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে স্কুল থেকে এসে ব্যাগ রেখেই স্মার্টফোনে ব্যবহার করছে। তরুণ–তরুণীদের মধ্যে এমনও আছে, এক হাতে ফোন ধরে অন্য হাতে খাচ্ছে। আবার পরিবারের বাবা–মায়েদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দিনের শেষে  দুজন হয়তো  সময় কাটাবে কিংবা সন্তানদের সময় দেবে কিংবা কোথাও ঘুরতে গিয়েছে কিন্তু নিজেদের সঙ্গে কথা বলার বদলে নিজ নিজ মোবাইল ফোনেই সময় কাটাচ্ছে। এগুলো প্রযুক্তি আসক্তির লক্ষণ।

 প্রযুক্তি আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাবা–মায়েরা শিশুদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। শিশু খাচ্ছে না স্মার্টফোন দেখিয়ে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কিন্তু আমরা শিশুকাল থেকেই সন্তানকে স্মার্টফোন অভ্যস্ত করছি। এটি একদমই উচিত নয়। আবার আমি মনে করি যারা স্কুলে পড়ছে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাদের সরাসরি মোবাইল দেওয়া ঠিক না। আবার নবম–দশম কিংবা কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হাতে আমরা স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু কতক্ষণ তারা স্মার্টফোন ব্যবহার করবে এই সময়টা নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। এছাড়া খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়া, বাড়িতে গান–আবৃত্তি শেখানোর ব্যবস্থা করা, আত্মীয়–স্বজনদের সঙ্গে যোগযোগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সন্তানদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।