‘বাচ্চাদের স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব’

স্কুল এমন একটা জায়গা, জীবনের প্রথম শিক্ষা স্কুলেই হয়। এই শিক্ষাই সারা জীবন কাজে লাগে, একটি বাচ্চা জন্মের পর থেকে তার ধীরে ধীরে মানসিক, সামাজিক উন্নয়ন হয়। তিন বছর থেকে আজকাল প্রি স্কুলে ভর্তি হয়। পাঁচ বছর বয়স থেকে বাচ্চারা স্কুলে যায়। স্কুল মেন্টাল হেলথ খুবই জরুরি। এখন আমরা একক পরিবারে বাস করি, একসময় আমরা যৌথ পরিবারের বাস করতাম। বাচ্চাদের কোনো সমস্যা হলে দাদা, দাদি নানা, নানি, চাচা, চাচি সঙ্গে আলাপ করে সমাধান পেত। এখন বাচ্চাদের কোন সমস্যা হলে একক পরিবারের বসবাস করার কারণে বাচ্চারা বাবা-মাকে অনেক কথা বলতে চান না, বা বলতে পারে না সেটা। প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ২২ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাচ্চাদের স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব’ শিরোনামে এ সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা মারিয়া খান নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

উন্নত দেশে প্রত্যেক স্কুলে অন্তত একজন করে সাইকিয়াট্রিস্ট থাকেন। তারা কাউন্সেলররে কাছে পরামর্শের জন্য পাঠাতে পারেন।

প্রথমত বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না অথবা নানা রকম সমস্যা হয়। সোমাটিক সিম্পটম ডিসঅর্ডারের কারণে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা হয়। বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় সাইকিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার হতে পারে।

তিন বছর থেকে বাচ্চারা স্কুলে ভর্তি হয়। কারও কারও জন্য স্কুলে ভর্তি হওয়া, পড়াশোনাটা চাপ হয়ে যায়। এই কারণে শিশুদের মানসিক সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় খিঁচুনি দেখা যায়। শিশু কথাবার্তা কমিয়ে দেয় অথবা শিশু কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। অভিভাবকের কথা শুনে না। ওই সব সমস্যা হয়। আচরণগত সমস্যা হয়।

শিশু থেকে কৈশোর, পরে যৌবনে পা রাখে। অভিভাবকেরা সহযোগিতা করতে চায় না। অনেক রকম সমস্যা হয়। প্রতিটি স্কুলে তিন মাস অন্তর অন্তর সাইকিয়াট্রিক স্ক্রিনিং করা যেতে পারে। তাতে স্কুলের বাচ্চাদের কারও যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে সেই সমস্যাগুলো চলে আসবে। স্কুল কাউন্সিলর এর সমাধান করতে পারবেন। স্কুলের সহপাঠীরা, শিক্ষকেরা এটা প্রথম বুঝতে পারে। স্কুলে যদি একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ থাকেন তিনি বাচ্চার সঙ্গে কথা বলে সমাধান করে দিতে পারেন।

সন্তান কোনো না কোনো আসক্তিতে (মাদক, মোবাইল, ইন্টারনেট) জড়িয়ে পড়ছে। অভিভাবক হিসেবে কি করবেন? এর উত্তরে ফাতিমা মারিয়া খান বলেন কৈশোরে আসক্তির সময় থাকে। স্কুলের বাচ্চারা তাদের বন্ধুদের ফলো করে। এটাকে বলা হয় পিআর প্রেশার। ইন্টারনেট আসক্তি, জুয়া খেলা, সেক্সুয়াল আসক্তিসহ মাদকের মতো ভয়াবহ আসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এই সব আসক্তি হলে কি করা দরকার। স্কুলে যদি সাইকিয়াট্রিক স্ক্রিনিং করা হয় তাহলে স্কুলে ধরা পড়ে। উন্নত দেশে প্রত্যেক স্কুলে অন্তত একজন করে সাইকিয়াট্রিস্ট থাকেন। তারা কাউন্সেলররে কাছে পরামর্শের জন্য পাঠাতে পারেন।

গত ২২ নভেম্বর ২০২২, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পাঠ্যপুস্তকে যদি এ বিষয়ে কোন অধ্যায় থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা পড়ে জানতে পারবে। স্কুলজীবনে কারও কারও মাদক গ্রহণ শুরু হয়। ধূমপান যে মাদক এটা তাদের জানাতে হবে। স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক নিয়মিত তাদের নিয়ে বসতে পারেন। আলোচনা করতে পারেন। এটা নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। নিয়মিত আলোচনায় যদি বসা হয়, তাহলে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে পারেন। এতে তারা দ্রুত ভালো হয়ে যেতে পারে।

কোন কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখে বুঝব যে বাচ্চাকে কখন বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে?

এর উত্তরে ফাতিমা মারিয়া খান বলেন যদি বাচ্চার লক্ষণ দেখা যায় হঠাৎ করে তার আচরণ পরিবর্তন হয়, আগে থেকে ডিপ্রেশনে হচ্ছে কিনা, রাতের ঘুমের প্যাটার্ন বদলেছে কিনা, খাবারের রুচি বদলেছে কিনা।

যারা ইয়াবা খায় তাদের ক্ষুদামন্দ হয়। খাবারে অরুচি হয়। পরিমাণে কম খাবার খায়। কিন্তু যখন ইয়াবা ছেড়ে দেয় তখন বেশি পরিমাণে খাবার খায়। হঠাৎ করে রেগে যায়, হঠাৎ করে টাকা চুরি করছে কিনা, মিথ্যা বলছে কিনা? এসব লক্ষণ অভিভাবক খেয়াল করেন, তাহলে অভিভাবকও বুঝতে পারবেন।

আর যেহেতু আমাদের দেশে উন্নত দেশের মতন স্কুল কাউন্সিলর সব স্কুলে নেই তাই অভিভাবকের দায়িত্ব বেশি। অন্য অভিভাবকও যদি দেখেন কারও বাচ্চা কান্নাকাটি করছে কিনা, কারও সঙ্গে ব্রেকআপ হয়েছে কিনা, পরীক্ষা খারাপ করছে কিনা। এ জন্য বলা হয় পজিটিভ প্যারেন্টিং স্টাইল মেনে চললে ভালো। কারও সঙ্গে উপসর্গ যদি মিলে যায় তাহলে বাচ্চার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। তাকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। তাকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।