প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান ‘সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে কী করবেন?’—এ বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন।
পরামর্শ সভায় অংশ নিয়ে ডা. ফারজানা রাহমান বলেন, সন্তানের বেড়ে ওঠা থেকে তাদের ভবিষ্যতের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে মা-বাবার ওপর। মা–বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটা ভালো হতে হবে। সম্পর্ক সহজ–সুন্দর, চমৎকার হলে সন্তানেরা মা–বাবার কথা শুনবে। এ ক্ষেত্রে মা–বাবা যদি সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলেন, সেটি সহজেই গ্রহণ করবে। আমাদের মা–বাবাকে মনে রাখতে হবে, এ প্রজন্মের শিশুরা স্পর্শকাতর, অনুভূতিপ্রবণ ও বুদ্ধিমান। সন্তানেরাও মা–বাবার আচার–আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তাই মা–বাবার দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন পরিশীলিত হতে হবে। পৃথিবীর রূপ–রস–গন্ধকে ভালোভাবে উপভোগ ও উদ্যাপন করার জন্য পড়াশোনা করাটা জরুরি। এই বিষয়ে সন্তানকে বোঝাতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রেই মা–বাবা তাঁদের পছন্দ–অপছন্দ অবলীলায় সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে সন্তানের মধ্যে তৈরি হতে পারে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্তান ভবিষ্যতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে কোনো একটি বিষয়ে দুর্বল হতেই পারে। কেউ হয়তো গণিতে ভালো করছে না, কিন্তু বাংলায় কিংবা চিত্রাঙ্কনে ভালো করছে। এ ক্ষেত্রে সন্তানের ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সন্তানকে জোর করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর পথ থেকে সরে আসতে হবে। আর কোনো বিষয়ে সন্তানের দুর্বলতার কারণ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে মা–বাবাকে আন্তরিকভাবে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে সমাধানের পথটা সহজেই পাওয়া যাবে।
নিজেদের ইচ্ছা পূরণের সিঁড়ি হিসেবে সন্তানকে ব্যবহার করা ঠিক নয় উল্লেখ করে ডা. ফারজানা বলেন, ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে ছোট সিদ্ধান্তগুলো নিতে শেখান। যেমন সে কী পড়বে—এসব তাকেই ভাবতে দিন। সন্তানের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করা হলে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠবে। আর নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া সহজ হবে। মনে রাখবেন, প্রতিটি শিশুর মধ্যেই কোনো না কোনো প্রতিভা থাকে। কেউ ভালো গান গায়, কেউ ভালো ক্রিকেট খেলে, কেউ গণিতে খুব ভালো। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তাকে তার পছন্দের বিষয় শিখতে সাহায্য করুন।
পরামর্শ সভায় ডা. ফারজানা রহমান বলেন, সন্তানকে একটি ভালো শৈশব উপহার দেওয়া মা–বাবার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাঁরা যদি সন্তানদের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে একজন শিশুর পক্ষে একটি ভালো শৈশব পাওয়া সহজ হয়। ভালো ফলাফলের চেয়ে সন্তানের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার বন্ধুর মতো সম্পর্ক হলে প্রাতিষ্ঠানিক ফলও তাদের ভালো হবে।
সন্তানরা জীবন চলার পথে ভুল করতেই পারে উল্লেখ করে ডা. ফারজানা বলেন, সন্তান ভুল করলে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। তাকে আশ্বস্ত করতে হবে তার পাশে মা–বাবা রয়েছে। কঠিন শাস্তি দিয়ে কখনোই সমস্যার সমাধান হবে না। সন্তানের নেতিবাচক আচরণ শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার উদ্বেগের কারণটা খুলে বলুন। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সংবেদনশীল, তাই সন্তানকে তির্যক সমালোচনা করবেন না। এর ফলে আপনার সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব আরও বাড়তে পারে।
মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।