সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কি সচেতন

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক ‘সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কি সচেতন’—এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন। মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। প্রশ্ন উত্তরের আলোকে পরামর্শ সভার চুম্বক অংশ নিম্নরূপ:

প্রশ্ন:

সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কি সচেতন?

ডা. সরদার আতিক: বর্তমান সময়ের অভিভাবকেরা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সচেতন। মা–বাবারা সন্তানের মানসিক সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, আরও বেশি সচেতনতা জরুরি।

প্রশ্ন:

শিশু–কিশোরদের রুটিনে কীভাবে অভ্যস্ত করা যায়?

ডা. সরদার আতিক: অভিভাবকেরা সাধারণত শিশু–কিশোরদের কোনো একটি বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা না করে তাকে স্বপ্ন দেখতে সহযোগিতা করতে হবে। কোনো একটি বিষয় বোঝানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা সাধারণত সন্তানের যুক্তি, আবেগ ও প্রয়োজনকে অস্বীকার করে নিজের মতটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এতে হিতে বিপরীত হয়। অভিভাবকেরা যদি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো একটি বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করতে চান, তাহলে ইতিবাচক ফল আসবে। সন্তানকে রুটিনে অভ্যস্ত করার ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা নিজের জীবনের কথা সন্তানকে বলতে পারেন। অভিভাবকেরা নিজেরা কীভাবে পড়াশোনা করেছেন, ক্যারিয়ারে কীভাবে সফল হয়েছেন, জীবনে রুটিন মেনে চলার সুবিধাগুলো কী কী—এ তথ্যগুলো সন্তানকে সরবরাহ করতে হবে। রুটিন ছাড়া লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়, এই বিষয়ের সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য সন্তানকে সরবরাহ করতে হবে।

প্রশ্ন:

সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকের আচরণ কী রকম হবে?

ডা. সরদার আতিক: অভিভাবকেরা সন্তানকে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলা শেখাবেন। সন্তানের সামনে মিথ্যাচার করবেন না। মা–বাবাকে সন্তানের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। সন্তান তার অনুভূতিগুলো, যেমন আনন্দ–বেদনা, হাসি–কান্না, রাগ ঠিকমত প্রকাশ করতে পারছে কি না, সেটি মা–বাবাকে খেয়াল করতে হবে। সন্তান জন্ম দেওয়াটাই মুখ্য বিষয় নয়। মা–বাবা হয়ে উঠতে হলে এই বিষয়গুলো সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে। সন্তানের সঠিক চাওয়াটা মা–বাবা পূরণ করবেন।

প্রশ্ন:

সন্তানের আচরণ পরিবর্তনে মা–বাবার ভূমিকা কী রকম হবে?

ডা. সরদার আতিকা: সন্তানের ভুল আচরণ শোধরানোর দায়িত্ব মা–বাবার। আমরা সাধারণত সন্তানের ভুল আচরণের জন্য সমালোচনা করি, সঠিক আচরণ কী হতে পারে, সেটা বলি না। এর ফলে সন্তান সঠিক নির্দেশনা পায় না। সন্তানের সঠিক সামাজিকীকরণ হয় না। সন্তানকে সমালোচনা না করে ইতিবাচক শব্দে সঠিক আচরণের পথ নির্দেশ করতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রযুক্তি কিংবা মাদকের আসক্তি থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে অভিভাবকের করণীয় কী হবে?

ডা. সরদার আতিক: প্রতিনিয়ত আমরা মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অভিভাবকেরা যদি নিজেদের মানসিক চাপগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারেন, তাহলে কিন্তু তার নেতিবাচক প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে। অনেক সময় মা–বাবারা নিজেদের মানসিক চাপগুলো নেতিবাচক উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করেন। এর ফলে দেখা যায় পরিবারে একধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই পরিবেশ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে সন্তানেরা অনেক সময় প্রযুক্তি কিংবা মাদকে আশ্রয় খোঁজে। তাই সন্তানদের জন্য একটা সুস্থ–সুন্দর পারিবারিক আবহ নিশ্চিত করতে হবে। মা–বাবা যদি সন্তানকে গুণগত সময় দেন, তাহলে সন্তানের খারাপ কিছুতে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।