যাঁরা বিষণ্নতায় ভুগছেন, তাঁদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনুন

প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত মাদকবিরোধী পরামর্শ সভায় (বাঁ থেকে) ডা. ফারজানা রহমান, ডা. মোহিত কামাল, ডা. সরদার আতিক ও ডা. রাহেনুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে।
ছবি: প্রথম আলো

যাঁরা বিষণ্নতায় ভুগছেন, তাঁদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক। চিকিৎসকেরা বলেছেন, বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তিদের প্রতি সহযোগিতা-সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যাঁরা মাদক সেবন করেন, তাৎক্ষণিকভাবে কেউ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত ১৬৮তম মাদকবিরোধী পরামর্শ সভায় রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে শনিবার কয়েকজন চিকিৎসক এসব কথা বলেন।

পরিকল্পিতভাবে ৯০ শতাংশ আত্মহত্যা সংঘটিত হয় মন্তব্য করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, আত্মহত্যা কোনো রোগ নয়। তবে আত্মহত্যা হচ্ছে রোগের পরিণতি। চূড়ান্তভাবে বিষণ্নতায় ভোগা মানুষ আত্মহত্যার পথে পা বাড়ান। আবার কেউ কেউ তীব্র কষ্ট পান, যে কষ্ট কোনোভাবেই সামলে উঠতে পারছেন না। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

চিকিৎসক মোহিত কামাল আরও বলেন, কারও মধ্যে যদি আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত তাঁদের চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত।

সন্তানদের সৃজনশীল কাজে যুক্ত করার পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এ প্রজন্মের সন্তানেরা যতটা না আমাদের সন্তান, তার চেয়ে বেশি এই সময়ের সন্তান। তারা প্রযুক্তির সন্তান। দূরদেশের বাবা-মায়েরা সন্তানের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করছেন, এই সময়ের সন্তানেরা কিন্তু প্রযুক্তির কারণে একমুহূর্তেই তা জানতে পারছে। তখন একটা তুলনা চলে আসে। এই তুলনা থেকেই সন্তানদের মন খারাপের সূত্রপাত।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে চিকিৎসক ফারজানা রহমান আরও বলেন, ‘সন্তানদের ডায়েরি লেখার অভ্যাস করাতে পারেন। গান-আবৃত্তি শোনা কিংবা শেখানোর সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। ভালো সিনেমা দেখাতে পারেন কিংবা বই পড়ায় অভ্যস্ত করতে পারেন।’

ছোট শিশুদের মা–বাবাকে বেশি সময় দেওয়ার পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরদার আতিক। তিনি বলেন, মা–বাবা সন্তানদের সময় দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে সন্তানদের বয়স অনুযায়ী মা–বাবাকে সময় দিতে হবে। বড় শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা সপ্তাহে তিন দিন আবার বড় ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক দিন হতে পারে। এ সময়ে অভিভাবকেরা সন্তানের কথা শুনবেন। সন্তানেরা যাতে এই সময়ে তার প্রয়োজনীয় কথাটা বলতে পারে। এই সময়ে অভিভাবকেরা সন্তানদের কোনো উপদেশ দেবেন না কিংবা পরামর্শ দেবেন না। সন্তানদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। সে কতক্ষণ খেলবে? কতক্ষণ মোবাইল হাতে পাবে কিংবা কতক্ষণ পড়াশোনা করবে?

সন্তানেরা দেখে দেখে সবচেয়ে বেশি শিখে থাকে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসিক মনোবিদ রাহেনুল ইসলাম। তিনি বলেন, মা–বাবা কাজের লোকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলছেন, কীভাবে বিরক্তি বা রাগ প্রকাশ করছেন, তা দেখে দেখে কিন্তু সন্তানেরা শিখে থাকে। তাই অভিভাবকদের যদি আচরণে ত্রুটি থাকে, তা সংশোধন করতে হবে। অভিভাবকদের ত্রুটিপূর্ণ আচরণ সন্তানদের মানসিক গঠনে বহুগুণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা একসময় সন্তানেরা অভিভাবকদের ওপর প্রয়োগ করবে।