এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যাদের মোবাইলে আসক্তি ঘটে যায়, অনেক ক্ষেত্রেই তারা মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারে। এর একটা কারণ হলো, মোবাইলে বিশ্বজগৎ হাতের মুঠোয় থাকে। কখনো কখনো কেউ হয়তো কৌতূহল থেকে, বা কারও পোস্ট দেখে বা যে কোন কারণেই মাদকের বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহ দেখালে তখন কিন্তু সে ধীরে ধীরে মাদকে আসক্ত হয়ে যেতে পারে।’
মোবাইল আসক্তি ও মাদকাসক্তি এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই দুই ধরনের আসক্তির মধ্যে সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। সাধারণত মাদকের ক্ষেত্রে আমরা জানি যে কৌতূহল, পারিবারিক অসামঞ্জস্যতা, ব্যক্তিত্বের ত্রুটি বা মাদকের সহজলভ্যতা নানা কারণে একজন মাদকে আসক্ত হয়ে যেতে পারে। একই কারণ মোবাইল আসক্তির ক্ষেত্রে সত্য। মাদকের প্রতি কৌতূহল বা মাদক কোথায় পাওয়া যেতে পারে এই ধরনের আগ্রহ থেকেও মোবাইলে আসক্ত যে কেউ মাদকে আসক্ত হয়ে যেতে পারে। কারণ মোবাইলের মাধ্যমেই সে জানতে পারে এই সব তথ্য।
ছোটবেলা থেকে একজন শিশুর মধ্যে না বলার অভ্যাস বা তার অভিভাবকের কাছে সবকিছু খুলে বলার পরিবেশটা কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, ‘সাধারণত ৫ বা ৬ বছর থেকে শিশুদের না বলার ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করা উচিত। যেমন সুশৃঙ্খল একটি শিশুর জীবনে কেউ যদি তাঁকে বলে আরও একটু বেশি সময় খেলতে, আরও একটু বেশি সময় টিভি দেখতে তাহলে সে যেন না বলতে পারে। কেবল শিশুকে না বলা শেখাতে হবে, তাই নয়। একই সঙ্গে তাঁকে মন্দ স্পর্শ সম্পর্কেও শেখাতে হবে। সে যেন বাবা-মাকে এই সব কথা বলতে পারে, সেই পরিবেশটাও তৈরি করতে হবে।’
অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোন কিছুই তাঁদের বাবা-মাকে জানাতে চায় না। কারণ বাবা-মাকে তারা ভয় এই ভেবে যে, বাবা-মা তাদের বকাঝকা করতে পারে, অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে পারে, কখনো কখনো অন্যের কাছে সন্তানের সমালোচনাও করতে পারে। এই সব কারণেই সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকের দূরত্ব বাড়তে থাকে। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ডা. ফারজানা রহমান সকল অভিভাবকদের অনুরোধ করেন তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার মানসিকতা রাখেন। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা কোন ভুল করে ফেললে বা যেকোনো খারাপ পরিস্থিতিতে বাবা-মায়ের কাছে এসে যেন নিজেদের ভুল বুঝে, অনুতপ্ত হয়ে নিজেদের ভুল বা সমস্যার কথাটা বলতে পারে। জীবনে আমরা অনেক সময়ে পাব নিজেদের বা সন্তানদের বিচার করার। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে যখন সন্তানদের সাহায্যের প্রয়োজন তখন যেন সন্তানেরা বুঝতে পারে যে, তার বাবা-মা জীবনের ভালো-মন্দ সব সময়েই তাঁদের ভালোবাসেন। বাবা-মা তাঁদের পাশে আছেন।
সন্তানকে মোবাইলের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, 'প্রথমেই বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধনটা দৃঢ় করতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সন্তানকে যুক্ত করতে হবে। যেমন গান, নাচ বা আবৃত্তি শেখা, ছবি আঁকা, বইপড়া কর্মসূচিতে যুক্ত করা, সাঁতার বা মার্শাল আর্ট শেখানো। সবচেয়ে বড় কথা সন্তানের মধ্যে একটি মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করে দিতে হবে। এটা ঠিক যে ,এটি একটি কঠিন কাজ কিন্তু অসম্ভব নয়। পাশাপাশি বাবা-মাকে এটাও দেখতে হবে, মোবাইল ব্যবহারের পেছনে সন্তানের মন খারাপ, দুশ্চিন্তা, একাকিত্বসহ অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা। বিষয়টা এমন কিনা যে, সন্তান আর কোথাও তাঁর কথা ভাগাভাগি করার সুযোগ পাচ্ছে না বলেই মোবাইল ব্যবহার করছে। মাদক এবং মোবাইল দুই আসক্তি মুক্তির চিকিৎসায় মূলত রোগীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার চেষ্টা করা হয় যে, তারা ইচ্ছে করলেই মোবাইল বা মাদক যেকোনো আসক্তি থেকে দূরে থাকতে পারে। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে।’ বাবা-মায়েদের আশ্বস্ত করে ডা. ফারজানা বলেন, ‘বাবা-মায়েদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসায় যেকোনো আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসা বিষয়ে তিনি জানান বাংলাদেশের সকল সরকারি হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে মাদকাসক্তি সহ যেকোনো মানসিক রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে।’