‘কল লিস্ট থেকে মাদকসেবী বন্ধুদের নম্বর একেবারে মুছে দিতে হবে’

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভা। ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল, ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার ৪৯তম সভায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত অতিথিদের মাদক সংক্রান্ত নানা বিষয়ে পরামর্শ এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। উক্ত সভায় চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করে লিখেছেন আশফাকুজ্জামান। আজকে থাকছে পর্ব-৮৮।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৮ বছর। প্রায় ১১ বছর যাবৎ ফেনসিডিল নিচ্ছি। এখন এ নেশা থেকে মুক্ত থাকতে চাই। এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ চাই।

উত্তর: ইচ্ছে করলে যেকোনো নেশা থেকেই মুক্ত থাকা যায়। নেশা ছাড়া এমন কঠিন কিছু নয় যে একদমই ছাড়া যায় না। সবচেয়ে বেশি ভালো হয় রোগীরা যদি নিজ থেকে নেশা ছাড়ার কথা বলে। কেউ যদি নিজ থেকে নেশা ছাড়তে চায়, তার জন্য কাজটি অনেক সহজ হয়। আপনি অবশ্যই ফেনসিডিল ছাড়তে পারবেন। কারণ, আপনার ইতিবাচক দিক রয়েছে। আপনি নিজেই ফেনসিডিল ছাড়তে চাইছেন। কখনোই মাদক গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখার দরকার নেই। আপনার স্ত্রীসহ পরিবারের সবাইকে জানান। তাদের সহযোগিতা চান। মাদক ছাড়তে চেষ্টা করেও অনেকে ছাড়তে পারে না। আপনিও কয়েকবার চেষ্টা করেছেন পারেননি। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ, নেশা ছেড়ে দিলে কিছু মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হয়। যে কারণে রোগীরা আবার নেশা করতে বাধ্য হয়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ আরও জানান, মাদকমুক্ত থাকার কিছু শর্ত আছে। যেমন: যে স্থানে মাদক গ্রহণ করা হয়, সেখানে গেলে, মাদক গ্রহণকারী বন্ধুদের দেখলে, যে সময় মাদক নেওয়া হতো, সে সময় এলে মাদকের প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ বেড়ে যায়। ফলে এসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে। এখন মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কল লিস্ট থেকে মাদক গ্রহণকরী বন্ধুদের নম্বর একেবারে মুছে দিতে হবে। আপনার কাছে টাকা রাখা যাবে না। পরিবার ও চিকিৎসকের সহযোগিতা নিতে হবে। সর্বোপরি, একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারেন। এখানে আপনার শরীর পরীক্ষা করা হবে। ফেনসিডিল ছাড়ার পর যে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি হবে, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তার চিকিৎসা করা হবে। নিজের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মাদক নিতে ইচ্ছে করলে আপনার সন্তানসহ প্রিয় মানুষের কথা ভাববেন। প্রিয়জনের কাছে থাকার চেষ্টা করুন। মাদক নিতে ইচ্ছে করলেই সন্তান ও স্ত্রীর কাছে থাকুন। পরিবারকে অবশ্যই জানাতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। এটা একটা রোগ। অন্য কোনো রোগ হলে কি আপনি লুকিয়ে রাখতেন? তাই পরিবারকে জানাতে হবে।