শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে শিক্ষকদের ভূমিকা

২৮ অক্টোবর প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। এ বছরের (২০২৪) ২৮ অক্টোবর প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো.জোবায়ের মিয়া ‘শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে শিক্ষকদের ভূমিকা’—এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন।

শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে শিক্ষকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে ডা. মো.জোবায়ের মিয়া বলেন,শিশু–কিশোরেরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষাটা শিশু–কিশোরেরা শিক্ষকদের কাছ থেকেই শিখে থাকে। মা–বাবা যখন একজন শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠান, তখন কিন্তু তারা অনেকটা নির্ভার থাকেন। তাঁরা মনে করেন, বিদ্যালয়ে থাকার সময় আমার সন্তানটি শিক্ষকদের সাহচর্যে থাকবেন। তার সময়টা ভালো কাটবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে ঠিকমতো মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না, পড়াশোনায় ভালো করতে পারছে না, তাদের প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগী হতে হবে। শিক্ষকেরা তাদেরকে বেশি সময় দেবেন। আন্তরিকভাবে শিক্ষার্থীর না বলা কথাগুলো বুঝতে চেষ্টা করবেন।’

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতি আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন একজন শিক্ষার্থী শিশু থাকে তখন পরামর্শ, উপদেশ কিংবা অনুশাসনের মাধ্যমে শিক্ষকেরা তাকে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষাটা দিতে পারেন। কিন্তু কৈশোরে পৌঁছানো শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের আচরণ যদি কর্তৃত্বপরায়ণ হয়, কিংবা শুধু শাসনের মাধ্যমে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে হিতে বিপরীত হবে। কারণ, এ সময় কিশোর–কিশোরীর ব্যক্তিত্বের ধারণা গড়ে ওঠে। প্রতিটি বিষয়ে তাদের মত প্রকাশের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা যদি কিশোর–কিশোরীদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেন, তাদের কথাগুলো ধৈর্য্যসহকারে শোনেন, তাহলে ভালো ফল আসবে। কিশোর–কিশোরীদের মানসিক বিকাশ ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হবে। আমি যে মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতা করছি, সেখানে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, সিলেবাস নির্ধারণের সময় শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়। প্রতিটি কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষার চর্চা করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকশিত হবে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো.জোবায়ের মিয়া।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আচরণ প্রসঙ্গে ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গল্পের ছলে কোনো মজার ঘটনা বর্ণনার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক পাঠদানের প্রক্রিয়াটা শুরু করতে পারেন। এ ছাড়া একজন শিক্ষক একটানা ক্লাস না নিয়ে বিরতি দিতে পারেন। সরল কথায় উদাহরণ দিয়ে কঠিন পাঠকে সহজ করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। একজন শিক্ষক যদি পাঠদানের ক্ষেত্রে আন্তরিক হন, নিজে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে আসেন, আনন্দের সঙ্গে পাঠদানপ্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন, তাহলে সহজেই শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে পারবেন।

পরামর্শ সভায় মাদকাসক্তি প্রতিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাদকাসক্তিকে না’ শুধু মুখে বললেই হবে না, শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইতিবাচকভাবে আনন্দ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে হবে। একজন শিক্ষার্থী খেলাধুলার (ইনডোর–আউটডোর) সুযোগ পেলে নির্মল আনন্দ উপভোগ করবে, আত্মবিশ্বাসী হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে, মাদক থেকে দূরে থাকবে।’

যুগোপযোগী পাঠদানপ্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, ‘সমাজ পরিবর্তনশীল। বর্তমানে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা পরিচিত হচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষকদেরও যুগোপযোগী হতে হবে। পাঠদানপ্রক্রিয়ার আধুনিক ধরন সম্পর্কে একজন শিক্ষকের ধারণা থাকতে হবে, শ্রেণিকক্ষে তার প্রতিফলন থাকবে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষককে যত্নবান হতে হবে। শিক্ষার্থীর পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করবেন শিক্ষক এবং সমাধানের উপায় বের করবেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষকের নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে।’

বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে ডা. জোবায়ের বলেন, যেসব শিক্ষার্থী সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদেরও বন্ধু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। ধরুন, একজন শিক্ষার্থী দারুণ গিটার বাজায়, তার সহযোগী হিসেবে একজন ড্রামার আছে, সেই ড্রামার মাদকে আসক্ত। এ ক্ষেত্রে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সেই ড্রামারের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। 

মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।