প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান ‘মাদকাসক্তি প্রতিরোধে সৃজনশীল কার্যক্রমের ভূমিকা’—এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন।
পরামর্শ সভায় সৃজনশীলতা প্রসঙ্গে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, যেকোনো বিষয়ের প্রতি ব্যক্তির নিজস্ব ভাবনা ও চিন্তার নিরন্তর চর্চাকে সৃজনশীলতা বলা হয়ে থাকে। যেমন: বিতর্ক, ছবি আঁকা, গান শোনা, গান শেখা, গল্পের বই পড়া, বাদ্যযন্ত্র বাজানো সৃজনশীল কাজের মধ্যে পড়ে। ধারণা করা হয়, আমাদের জীবনের দৈনন্দিন কাজ যেমন হাঁটাচলা, পোশাক পরা, কথা বলা—এগুলো মস্তিষ্কের বাঁ দিক নিয়ন্ত্রণ করে। আবার মানুষের চিন্তাচেতনা, বিবেকবুদ্ধি, সংস্কৃতি তথা সৃজনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের ডান দিকের অংশ।
আসক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একই কাজ বারবার করলে সেটির প্রতি মানুষের আসক্তি তৈরি হয়। যেমন, মাদক বারবার গ্রহণ করলে এটির প্রতি মানুষের আসক্তি তৈরি হয়। মানুষ কেন মাদকাসক্ত হয়, এর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাদক গ্রহণ করলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়, এর ফলে মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত হয় এবং আমরা আনন্দিত হই। মাদক কিন্তু আনন্দ পাওয়ার উপকরণ নয়। মাদক একধরণের ছদ্মবেশী শত্রু। অন্যদিকে যেকোনো সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ততা আমাদের অনন্দ দেয়। সৃজনশীল কাজ করার ফলেও মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। আমরা আনন্দিত হয়। তাই দেখা যাচ্ছে, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তদের আনন্দ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় সম্পাদিত হয়। এর ফলে মাদকাসক্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সন্তানদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে মা–বাবাকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, সকালে সন্তানদের নিয়ে হাঁটার অভ্যাস করা, মার্শাল আর্ট শেখানো, ভালো সিনেমা দেখার অভ্যাস করানো, গান শেখানো—এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মা–বাবার ভূমিকাই প্রধান। মা–বাবা যদি ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে যেকোনো ধরনের সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন তাহলে সন্তানের মাদকে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। সন্তানকে ভালো মানুষ ও সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে হলে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ততা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ড. ফারজানা রহমান বলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বাইরে দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার আয়োজন রয়েছে। বয়সভেদে মাদকাসক্তির চিকিৎসার ধরন বদলে যায়। সঠিকভাবে চিকিৎসা পেলে মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে আসক্ত ব্যক্তিকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং পরিবারকে পাশে থাকতে হবে।
মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।