গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং কী ও কেমন

গত ২৯ নভেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ২৯ নভেম্বর ২০২৩, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত (১৬৮ তম) অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. মোহিত কামাল, ‘গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং কী ও কেমন’ এই বিষয়ের উপর আলোচনা করেন।

প্যারেন্টিং প্রসঙ্গে ডা. মোহিত কামাল বলেন, সহজ কথায় শিশু লালন–পালন করার প্রক্রিয়াকে প্যারেন্টিং বলে। জীবন সুন্দর করার জন্য ভালো প্যারেন্টিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই প্যারেন্টিংয়ের শুরুটা কিন্তু হয় গর্ভবস্থা থেকে। গর্ভবস্থায় মা যদি প্রশান্তিতে থাকে, উদ্বিগ্ন মুক্ত থাকে, পরিবারের সদস্যদের আদর–ভালোবাসা পায়, সঠিক চিকিৎসা পায় তাহলে মা একধরণের আত্নবিশ্বাস অর্জন করে। এই আত্মবিশ্বাস গর্ভের সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয়। আপরদিকে গর্ভবস্থায় মা যাদি আদর, ভালোবাসা না পায়, উদ্বেগ–উৎকন্ঠায় থাকে এটি গর্ভের সন্তনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিরাপদ সন্তান প্রসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের ক্ষেত্রে  প্রশিক্ষিত দাই দ্বারা ও শহরে ভালো হাসপাতালে যদি প্রসবের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মা অনেকটা উদ্বেগমুক্ত থাকে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ডা. মোহিত কামাল।

সন্তানের সঙ্গে পরিবারের আচরণ কীরকম হবে তার ওপর সন্তানের ব্যাক্তিতের ধরণ গড়ে ওঠে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক সন্তানদের পরিচর্যা করবে, নিরাপত্তা দেবে, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করবে, মানসিক চাহিদা পূরণ করবে, সন্তানের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেবে, সন্তানকে স্বাধীনতা দেবে কিন্তু এর একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকবে। গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিংয়ে বাবা–মা যেমন সন্তানের ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দেন তেমনিভাবে তারা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সন্তানকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন।

গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা সন্তানকে শিশুকাল থেকেই দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  বাবা–মায়েরা সন্তানের সামনে দ্বন্দে জড়াবেন না, ঝগড়া করবেন না। বাবা–মাকে সন্তানের সামনে ধৈর্য্যশীল হতে হবে।

মাদকাসক্তি ও প্রযুক্তি আসক্তি প্রসঙ্গে ডা. মোহিত কামাল বলেন মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে আসক্ত ব্যাক্তি যখন মাদক নেয় তখন মস্তিষ্ক থেকে এক ধরণের ডোপামিন নিসৃত হয়। এই ডোপামিন আসক্ত ব্যাক্তিকে আনন্দ দেয়। ফলশ্রুতিতে মাদকে আসক্ত ব্যাক্তি বার বার মাদক গ্রহণ করে। বর্তমানে কিশোর–কিশোরীরা মোবাইলে আসক্ত কিংবা বিভিন্ন ধরণের গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মোবাইল কিংবা প্রযুক্তি আসক্তির ক্ষেত্রেও মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিসৃত হয়, আসক্ত কিশোর–কিশোরীকে আনন্দ দেয়। মোবাইল,গেমস তথা প্রযুক্তি আসক্তি থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে হলে বাবা–মায়ের ভূমিকা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে এটি কেন ক্ষতিকর, এই আসক্তি মস্তিষ্কে কী ধরণের প্রভাব ফেলে।     

মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।