মাদকাসক্তি প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ২৮ মে ২০২৪, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন (১৭২ তম) মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো.জোবায়ের মিয়া ‘মাদকাসক্তি প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ এই বিষয়ের উপর আলোচনা করেন।
মাদকাসক্তি প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বিষয়ে ডা. জোবায়ের মিয়া বলেন, গবেষণার তথ্য মতে দেশ ও দেশের বাইরে ষাট শতাংশ মাদকাসক্তের বয়স ১৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। এই তথ্য থেকে সহজেই বোঝা যায় শিক্ষর্থীদের মধ্যে মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি সব থেকে বেশি থাকে। আমাদের সন্তানেরা কিন্তু দিনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান করে। তাই শিক্ষার্থীদের আচার–আচরণ পর্যবেক্ষণের সব থেকে বেশি সুযোগ পায় শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এই বিষয়গুলো কিন্তু শিক্ষকেরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেখে থাকেন। কোন শিক্ষার্থী যদি পড়াশোনায় খারাপ করে, কিংবা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই শিক্ষার্থীর সঙ্গে একান্তে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব্য কারনগুলো খুঁজে বের করা। সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষকদের নিয়মিত যোগযোগ রাখতে হবে এবং বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো অনুধাবনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি পৃথক সেল থাকতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকসক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির গুরুত্ব তুলে ধরে ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অবহিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আয়োজন যেমন: মাদকবিরোধী গান, নাটক কিংবা রচনা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী পরামর্শ সভার আয়োজন প্রসঙ্গে ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, আমরা শুনেছি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদকবিরোধী পরামর্শ সভার আয়োজনে বিরোধিতা করে থাকে, এটি একদমই উচিত নয়। কেননা স্মার্ট ফোনের কল্যাণে শিক্ষার্থীরা মাদক সম্পর্ক প্রায় সব তথ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। তাই পরামর্শ সভায় মাদকের কথা শুনলেই এর প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরী হতে পারে এটি কিন্তু ভুল ধারণা। বরং মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সঠিক তথ্য পাবে এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারবে। মাদক প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী পরামর্শ সভার প্রয়োজন রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের গুরুত্ব প্রসঙ্গে ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি ইনডোর–আউটডোর গেম, গান, নৃত্য, আবৃত্তি, বিতর্ক চর্চার পরিসর বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবে। মাদক প্রতিরোধে সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে মনের কথা সহজে খুলে বলতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এরকম আয়োজন রাখতে হবে। বর্তমানে অল্প কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর (পরামর্শক) ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগ্রহী শিক্ষকদের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।