মাদকাসক্তি কিশোর–কিশোরীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে

২০২৪ সালের ২১ আগস্ট প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক ‘মাদকাসক্তি কিশোর–কিশোরীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে’—এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন।

কিশোর–কিশোরীদের মানসিক গঠন প্রসঙ্গে ডা. সরদার আতিক বলেন, শিশু–কিশোরদের বয়সকে আমরা সাধারণত তিনটি পর্বে—প্রাথমিক পর্ব (১১ থেকে ১৪ বছর), মধ্যম পর্ব (১৫ থেকে ১৭ বছর), পূর্ণ পর্ব (১৮ থেকে ২১ বছর) ভাগ করে থাকি। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে শিশুর বয়স কাঠামোকে ১৮ বছরের নিচে ধরা হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু–কিশোরদের মানসিক গঠনের পরিবর্তনটা সবার চোখে ধরা পড়ে। কিশোর বয়সে এসে সন্তানেরা কিন্তু পরিবার থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই সময়ে তার নতুন বন্ধু তৈরি হয়। পরিবারের বাইরে তার মত প্রকাশের জায়গা গড়ে ওঠে। এই পরিবর্তনটা স্বাভাবিক। সন্তানের ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণাও কিশোর বয়সে দেখা দেয়। কিশোর–কিশোরী তার প্রয়োজনের কথাটা পরিবারকে বলতে শুরু করে।  

মাদকাসক্তির  লক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিশোর–কিশোরীরা মাদকে আসক্ত হলে তাদের আচরণে এক ধরনের ঔদ্ধত্য, স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ করা যায়। এই সময়ে মাদকাসক্ত কিশোর–কিশোরী নেতিবাচকভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে, নিজের কোনো ক্যারিয়ার প্ল্যান থাকে না, বন্ধুবান্ধব দ্রুত পরিবর্তন হতে শুরু করে, টাকা খরচ করার প্রবণতা বাড়ে, মিথ্যা বলার প্রবণতা দেখা যায় এবং চুরি করার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই ধরনের আচরণ দেখা দিলে মা–বাবাকে সচেতন হতে হবে।

মাদসক্তির লক্ষণ প্রসঙ্গে ডা.সরদার আতিক আরও বলেন, মাদকাসক্তির ফলে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে অপরিচ্ছন্ন থাকার প্রবণতা দেখা যায়। পরিশ্রম না করে অনন্দ পাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সৃজনশীল কাজ—কবিতা লেখা, আবৃত্তি কারা, গান শেখা, গান শোনা—এগুলোর প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এ ক্ষেত্রে পরিশ্রম ছাড়া তাৎক্ষণিক আনন্দ পাওয়ার জন্য কিশোর–কিশোরীরা মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

মাদক থেকে সন্তানকে দূরে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত, অভিভাবকদের সন্তানকে গুণগত সময় দিতে হবে। সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। কষ্ট করে কোনো কিছু পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, সন্তানকে সে বিষয়টি বোঝাতে হবে। না পাওয়াটাও জীবনের অংশ, সেটি সন্তানকে বোঝাতে হবে। সন্তানকে আমরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করব, কিন্তু কোনো ধরনের সুবিধায় অভ্যস্ত করে তুলব না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক।

কিশোর–কিশোরীদের কৌতূহলী মন প্রসঙ্গে ডা. সরদার আতিক বলেন, মানুষের জীবনে যত আবেগ আছে তার মধ্যে শক্তিশালী আবেগ হচ্ছে কৌতূহল। কিশোর–কিশোরীদের কৌতূহলের প্রবণতা বেশি থাকে। অনাবশ্যক কৌতূহল থেকে কিশোর–কিশোরীদের দূরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিশোর–কিশোরীদের সঙ্গে মা–বাবার সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ। মা–বাবারা যদি কিশোরমনের কৌতূহলগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারেন এবং অনাবশ্যক কৌতূহল থেকে দূরে রাখতে পারেন তাহলে সন্তানের বিপথে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

সন্তানকে নির্দেশনা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সন্তানকে কোনো নির্দেশ দিলে তা সুনির্দিষ্ট হতে হবে। মা–বাবার পছন্দ–অপছন্দের বিষয়গুলো সান্তানকে সরাসরি বলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা–বাবা নিজেই মোবাইলে অনেক বেশি সময় দিচ্ছেন, অন্যদিকে সন্তানকে মোবাইল ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন। এ ক্ষেত্রে কিন্তু মা–বাবার নির্দেশনা কাজে আসবে না।

মাদকবিরোধী পরামর্শ সভাটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সভাটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।