মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা
শ্রদ্ধা–ভালোবাসা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে
শিক্ষকের কাছে তরুণেরা যেন আস্থা পান, তেমন পরিবেশ তৈরির কথা বলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার।
নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাদকে জড়িয়ে যেতে দেখছেন তিনি। কিছু বলতে গেলে উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। মাদকবিরোধী পরামর্শ সভায় এক শিক্ষক জানতে এসেছিলেন কীভাবে তিনি শিক্ষার্থীদের মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত মাদকবিরোধী আন্দোলনের ১৬২তম পরামর্শ সভা গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, তরুণদের মধ্যে কৌতূহল অনেক বেশি থাকে। তাঁরা অনেক কিছুই ঘাঁটাঘাঁটি করেন কোনো প্রভাব বিবেচনা না করেই। এর জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থাও দায়ী।
ওই শিক্ষকের উদ্দেশে মেখলা সরকার বলেন, স্কুলশিক্ষার্থী বা তরুণদের সঙ্গে কৌশলে আচরণ করতে হবে। শিক্ষকের কাছে তরুণেরা যেন আস্থা পান, গ্রহণযোগ্যতা পান, তেমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রথমেই নেতিবাচক কথা বলা যাবে না বা মাদক খারাপ, তা সরাসরি বলা যাবে না। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে মাদকের প্রভাব নিয়ে কথা বলতে হবে।
মাদক ছাড়ার চেষ্টায় আছেন ২০ বছর বয়সী এক তরুণ। সভায় তিনি বলেন, তিনি একনাগাড়ে কোনো বিষয় নিয়ে একা একাই কথা বলতে থাকেন। তাঁকে পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা রহমান। তিনি বলেন, মাদকের প্রভাবে মানুষের মধ্যে বারবার এক চিন্তা চলে আসে। এতে অনেকে একনাগাড়ে কথা বলতে থাকেন। ব্যক্তিত্বে, আচরণে পরিবর্তন আসে, বিপর্যয় আসে। এ জন্য প্রথমে মাদক গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। ধীরে ধীরে অন্য সমস্যাগুলোও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট মো. রাহেনুল ইসলাম বলেন, মাদক ভয়ংকর, এটা তীব্র আনন্দ দেয়। মাদক থেকে বের হওয়া সহজ প্রক্রিয়া নয়। এর জন্য লেগে থাকতে হয়। তাই পারিবারিক সম্পর্ক এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ধূমপান ছাড়ার জন্য আত্মোপলব্ধি সবচেয়ে বেশি জরুরি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক সরদার আতিক কাছের মানুষদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর কথা বলেন।
বিএসএমএমইউ সহকারী অধ্যাপক ফাতিমা মারিয়া খান বলেন, মাদকের প্রভাবে পারিবারিক নির্যাতনও হয়। মাদকাসক্তকে ঘৃণা করা যাবে না। তাঁর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এসব মানুষকে দূরে ঠেলে দেওয়া যাবে না, কাছে টেনে নিতে হবে। নাহলে তাঁরা সমাজ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভেবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাবেন।
সভায় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে অনেকেই পরামর্শ নেন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর মাদকবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারী ফেরদৌস ফয়সাল।