মাদকাসক্তি মানসিক অবস্থার ভারসাম্য নষ্ট করে

গত ২৩ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন (১৭০ তম) মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ২৩ মার্চ ২০২৪, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন (১৭০ তম) মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক ‘মাদকাসক্তি মানসিক অবস্থার ভারসাম্য নষ্ট করে’ এই বিষয়ের উপর আলোচনা করেন।

সাধরণত মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই মাদক গ্রহন করে উল্লেখ করে ডা. সরদার আতিক বলেন, নিয়মিত মাদক নেওয়ার ফলে এর প্রতি মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মাদক চিন্তার ভারসম্য নষ্ট করে।  ইয়াবা,গাঁজার মত মাদক নিয়মিত গ্রহন করলে মানুষ তাঁর যৌক্তিক জগৎ  থেকে দূরে সরে যায়। সাধারণত মানুষ বাস্তব জগৎ ও কল্পনার জগৎ এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। কিন্তু যে নিয়মিত ইয়াবা,গাঁজা সেবন করে সে বাস্তব ও কল্পনার জগৎ এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। এর ফলে মাদকসেবীদের  চিন্তার জগৎ সহজ থাকে না। আবার যারা হেরোইন, প্যাথেডিন নিয়মিত সেবন করে তারা চিন্তাই করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য সহজ স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা তাদের লুপ্ত হয়। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক।

হতাশা ও বিষণ্নতা প্রসঙ্গে সরদার আতিক বলেন, হতাশা থেকে মাদকাসক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে। আবার হতাশার কারণে কেউ যদি বিষন্নতায় ভোগে এবং যদি সঠিক চিকিৎসা না হয় সেক্ষেত্রে বিষণ্নতায় ভোগা ব্যাক্তির আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়ে যায়। বিষণ্নতায় ভোগা মানুষের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবনতা ২০ গুন বেড়ে যায়। মাদকাসক্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রেও আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।মানুষের জীবনে অনেক ক্ষেত্রেই একটা ঝাপসা সময় আসে যখন সে জীবনের কুল কিনারা খুঁজে পায় না। এই সময়টায় ধৈর্য্য ধারণ করাটাও খুব কঠিন। ব্যাক্তিকে এই সময় মনের আলোয় পথ চলতে হয়। এই সময়টায় পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাক্তির জীবন সম্পর্কিত ধারণা অনেক ক্ষেত্রেই পরিববর্তন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জীবনের সমস্ত প্রাপ্তির পরও ব্যাক্তি সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ব্যক্তি হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। এটি কিন্তু ব্যাক্তির চিন্তার ত্রুটি। মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমের ব্যক্তির এই চিন্তার ত্রুটি দূর করা যায়।

 সাদা কালো চিন্তা প্রসঙ্গে সরদার আতিক বলেন, মানুষ অনেক সময় ব্লাক অ্যান্ড হোয়াইট ( সাদা–কালো) চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন: আমি পরীক্ষায় ফার্স্ট হবো নয়তো আমি কিছুই না। ব্যক্তির এই অবস্থান কিন্তু সঠিক নয়। বিষণ্নতায় ভোগার কারনে ব্যক্তি  এই ধরনের চিন্তা করে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

মাদক নেওয়ার কারনে আসক্ত ব্যাক্তির কাজ–কর্মের গুনগত মান কমে যায় উল্লেখ করে সরদার আতিক বলেন,আসক্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে কখনও কখনও অসংলগ্ন চিন্তা চলে আসতে পরে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না।

 আসক্তির নানা দিক প্রসঙ্গে  সরদার আতিক বলেন,আমাদের মনে রাখতে হবে এই সময়ে মাদকেই কিন্তু একমাত্র নেশা না। বর্তমানে যে কোন ব্যাক্তি মাদক ছাড়াও মোবাইলে আসক্ত হতে পারে। জুয়া খেলা কিংবা একাধিক সম্পর্কে জড়ানোর মত বিষয়ও আসক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।