‘মাদকাসক্তি থেকে বের হওয়া যাবে না, এটি ভুল ধারণা’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মাদকবিরোধী সভার আয়োজন করা হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মাদকবিরোধী সভার আয়োজন করা হয়।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা দেবব্রত পাল। তিনি কাজ করেন মাদকাসক্তদের নিয়ে। জানার আগ্রহ থেকে তিনি এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী সভায়। দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, অনেকে মনে করেন, একবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তা থেকে বের হওয়া যায় না। এটি কি ঠিক?

দেবব্রত পালের এই প্রশ্নের জবাবে দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। উপযুক্ত পরিবেশ ও চিকিৎসা পেলে অবশ্যই বের হয়ে আসা সম্ভব। এগুলো সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না বলেই অনেকে মাদক নেওয়া থেকে বের হতে পারছেন না।

মস্যা থাকলে তার সমাধান আছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তারপরও হতাশ হওয়া যাবে না।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গত ৬ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির জয়নুল আবেদিন আর্ট গ্যালারিতে মাদকবিরোধী সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এ এস এম রিদোয়ান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা বিজয় কুমার দত্ত।

অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

সহযোগিতায় ছিল চট্টগ্রাম বন্ধুসভা। সভায় পৃথকভাবে বিভিন্নজনকে পরামর্শ দেন দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

মাদককে ‘না’ বলেন সভায় আগত দর্শক।

সভায় অভিভাবক, মাদকাসক্তদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মাদকের ধরন, মাদকাসক্তি, তাঁদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অতিথি তাঁদের সেসব প্রশ্নের জবাব দেন।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের প্যানেল আইনজীবী এ এফ এম সালাউদ্দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে জানতে চান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের তাঁরা আইনি সহায়তা দিয়ে জামিনে বের করেন। এসব ব্যক্তিদের পরিবার থেকে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না। আইনি সহায়তা দেওয়ার কারণে বিভিন্ন পক্ষ তাঁদের পছন্দ করেন না। এই ক্ষেত্রে তাঁদের করণীয় কী?

পরামর্শ দিচ্ছেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক এ এস এম রিদোয়ান।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, এসব ব্যক্তি কেন মাদকাসক্ত হলেন, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তাঁদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হবে, কাউন্সেলিং করতে হবে। অভিভাবকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। এসব না করে শুধু বের করে নিয়ে এলে মাদকাসক্তরা আরও বড় অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারেন।

বাড়তি দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়ে দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সমস্যা থাকলে তার সমাধান আছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তারপরও হতাশ হওয়া যাবে না।

চিকিৎসক এ এস এম রিদোয়ান বলেন, অনেকে হতাশা থেকে মাদক নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু মাদক নিয়ে হতাশা দূর হয় না, বরং আরও বেশি সংকট তৈরি হয়।