নেতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক: মাদকাসক্তির ঝুঁকি

গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন (১৬২ তম) মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্টের একটি নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা। গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত অনলাইন (১৬২ তম) মাদকবিরোধী পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক ‘নেতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক: মাদকাসক্তির ঝুঁকি’ এই বিষয়ের উপর আলোচনা করেন।

শিশুর সঙ্গে বাবা–মায়ের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ডা. সরদার আতিক বলেন, শিশুর জন্মের দুই বছরের মধ্যে বাবা, মা কিংবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের সঙ্গে শিশুর একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এই সম্পর্ককে এটাসমেন্ট ফিগার বলে। এটাসমেন্ট ফিগারের ক্ষমতাটা অনেকটা ম্যাজিকের মত। যার সঙ্গে শিশুর এটাসমেন্ট ফিগার তৈরি হয় তার কথা শিশু শুনবে। পরিবারে যে সদস্য শিশুর যত্ন নেবে তার সঙ্গে শিশুর এটাসমেন্ট ফিগার তৈরি হয়। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশুর এটাসমেন্ট ফিগার তৈরি হয় না। ফলে শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন সে যদি কোন মানসিক চাপে ভোগে তা কাউকে বলতে পারে না। ফলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য কিশোর–কিশোরীরা মাদকের পথে পা বাড়ায়।

পরিবারের বাবা–মা যদি মাদকে আসক্ত হন তাহলে সন্তানের মাদকে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় উল্লেখ করে সরদার আতিক বলেন, জেনেটিক কারনে মাদকাসক্ত বাবা–মায়ের সন্তানের মাদকে আসক্ত হওয়ার ৪০ ভাগ সম্ভবনা রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক।

প্রযুক্তি আসক্তি প্রসঙ্গে ডা. সরদার আতিক বলেন, আমরা যদি কোন কাজ করে আনন্দ পাই তাহলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। সাধারণত ভালো কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, কোন অজানা বিষয় জানতে পারলে, খেলাধুলা, গান শুনলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। আমরা আনন্দ পাই। প্রযুক্তি আসক্তির ফলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হওয়ার প্রক্রিয়াটা নেতিবাচক উপায়ে সংগঠিত হয়। আমরা ক্রমাগতভাবে প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। যা আমাদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ্য করে তোলে।

বাবা–মা সন্তানকে গুনগত সময় দেবেন উল্লেখ করে ডা. সরদার আতিক বলেন, মা–বাবা সন্তানকে অবশ্যই গুনগত সময় দেবেন। সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। যে কোন সমস্যা থেকে সন্তানকে বের করে আনতে সহযোগিতা করবেন। অভিভাবকরা যদি সময় না দেন তাহলে সন্তানের প্রযুক্তি কিংবা মাদকে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সন্তান যদি প্রযুক্তি বা মাদকে আসক্ত হয়ে যায় তাহল সন্তানকে দূরে ঠেলে দেয়া যাবে না। সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। আসক্তির পথ থেকে বের হওয়ার জন্য সন্তানকে সহযোগিতা করতে হবে।

পারিবারিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে ডা. সরদার আতিক বলেন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ঘাটতি দেখা দিলে তাকে আমরা নেতিবাচক পারিবারিক সম্পর্ক বলে থাকি। আমাদের মনে রাখতে হবে ভালো কাজ যে কোন সময় থেকে শুরু করা যায়। পরিবারের সদস্যদের কথা মন দিয়ে শুনুন, করও ব্যক্তিত্বে আঘাত না দিয়ে সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করুন, আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি করুন।