মাদকের ভয়বহতা দূর করতে প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে। আর প্রতিরোধের জন্য অর্থের পাশাপাশি জ্ঞানের বিনিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকাসক্তের চিকিৎসা প্রক্রিয়াতে পরিবারকে যুক্ত করে এগোতে হবে। পরিবারকে, প্রতিষ্ঠানকে শুধু টাকাপয়সা না, জ্ঞানের বিনিয়োগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল প্রথম আলো ট্রাস্টের বিশেষ আয়োজন অনলাইন আলোচনা সভায় অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল এসব কথা বলেন।
এবারের আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসের স্লোগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনার প্রতিপাদ্য ছিল: পরিষ্কার যুক্তি, প্রতিরোধে মুক্তি। বেলা ৩টায় শুরু হওয়া সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক।
ডা. ফারজানা রহমান বলেন, ‘নানা কারণে পরিবারের যেকেউ হতাশায় বা মাদকের দিকে যেতে পারে। তবে পরিবারে যদি মূল্যবোধের চর্চা থাকে, সুসম্পর্ক থাকে তাহলে সন্তানেরা তাদের মনের কথা বলতে পারে। সৃজনশীলতার চর্চা হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সুসম্পর্ককে থাকলে মাদকাসক্তির ব্যাপারগুলো কম হবে।’
মাদকের ভয়াবহতা থেকে বের হয়ে আসার প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ‘যার যার জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। নিজের ও দেশের কথা ভেবে খারাপ বিষয়গুলো প্রতিরোধ করতে হবে, সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।’
মনে হচ্ছে পরিবারের কেউ মাদকে আসক্ত হয়েছে। লক্ষণগুলো কেমন হবে এবং এমন সময় কি করা উচিত? এর উত্তরে ডা. ফারজানা রহমান বলেন, ‘ব্যক্তির আচরণগুলো খেয়াল করতে হবে। বন্ধু বদলে যায়, দৈনন্দিন রুটিন বদলে যায়, চোখ লালচে হয়ে যায়। বাসা থেকে টাকা পয়সা বা দামি জিনিস হারিয়ে যায়—এমন লক্ষণগুলো মাদকাসক্তের আভাস দেয়। এ রকম হলে চিকিৎসার আওতায় নিতে হবে। কেউ আসতে না চাইলে জোর করে আনার বৈধতা আছে। এটা আইনেও আছে।
শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা নয় বরং পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব আছে। সময়, মনোযোগের বিনিয়োগ করতে হবে। তেমনিভাবে গণমাধ্যমগুলোও অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। খেলোয়াড়, সেলিব্রেটি, সংবাদপত্র ভূমিকা রাখতে পারে—বললেন আনিসুল হক।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘প্রথম আলোসহ অনেকেই করছে। তবে এগুলো মানুষ শুনতে চায় না। আমি মাদক নেব না—এটা একজন ব্যক্তির ভেতর থেকে উপলব্ধিটা আসতে হবে। এ ছাড়া যাদের মানুষ পছন্দ করে যেমন সেলিব্রেটি, তাঁরা এই গ্রুপটাকে সচেতন করতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন। ব্যক্তি ও পরিবার থেকে একজন শিশুকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে হবে।’
ডা. ফারজানা রহমান বলেন,‘দেখে যায় অনেক পরিবারে মাদক নেওয়ার ইতিহাস নেই। তবে তাদের সন্তানদের মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এটা হয় বন্ধদের মাধ্যমে এবং ধূমপান থেকে শুরু হয়। ধূমপানকে মাদকের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এ জন্য ধূমপান থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেন তিনি।’
শেষে সব ধরনের তামাক থেকে দূরে থাকার এবং নিজেকে মাদকমুক্ত রাখার প্রতি আহ্বান জানান আনিসুল হক। একই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার অংশ উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘“নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে/ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।” আমি নিজে যদি মাদকমুক্ত থাকতে পারি, তাহলে এমনিতেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একই সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যার যার জায়গা থেকে শ্রম দিতে হবে, সময় দিতে হবে, সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে—হোক সেটা মনোযোগের বা সময়ের। আমরা একটি মাদকমুক্ত পৃথিবী চাই, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’
অনলাইন এই আয়োজনটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার করা হয় প্রথম আলোর কার্যালয় থেকে।