সন্তানকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করতে অভিভাবকের ভূমিকা

মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা

অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার ১৫০তম আয়োজনের শুরুতেই বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রাহেনুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সন্তানদের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করে গড়ে তুলতে অভিভাবকের ভূমিকা বা দায়িত্ব কেমন হওয়া উচিত? উত্তরে ডা. রাহেনুল ইসলাম খুব স্পষ্টভাবে জানান, ‘একেক বয়সী সন্তানদের জন্য একেক রকম আচরণ হওয়া উচিত অভিভাবকদের। যেমন ৯-১০ বছর বয়সীদের সঙ্গে আচরণের সময়, সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অভিভাবকরা প্রায়ই শিশুদের সঙ্গে জোরে কথা বলি, একই কথা বারবার বলি। মনে করি জোরে কথা বললে কথাটা গুরুত্ব পাবে। কিন্তু বিষয়টা তা নয়। শিশুদের সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলতে হবে। বিষয়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য সন্তানের দিকে তাকিয়ে, সন্তানের কাছে গিয়ে তাকে গুরুত্ব দিয়ে কথা বলতে হবে। শিশুদের কথাও শুনতে হবে। তার মতামতের মূল্য দিতে হবে। শিশুকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। নিজের কাজ নিজেই যেন করতে পারে, সেইভাবে তৈরি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মোবাইল না দেখিয়ে নিজের খাবার নিজে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। পরিবারের সকলের নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে একসঙ্গে অন্তত একবেলা খাওয়া উচিত। এই সকল অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে সে আত্মবিশ্বাসী হবে। তার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়বে, তার ভাষার দক্ষতা বাড়বে। সুতরাং সেই শিশুটি তখন বুঝতে পারবে কোথায় তাকে না বলতে হবে, কিভাবে, কখন, কোথায় তার আচরণ কেমন হবে। কিভাবে সে জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পার হতে পারবে।’

গতকাল ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন অনলাইন মাদকবিরোধী আয়োজনটি ছিল মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার ১৫০তম পর্ব। এই পর্বে অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের রেসিডেন্ট সাইক্রিয়াট্রিস্ট ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম। প্রায় ৩১ মিনিটের এই আয়োজনে সন্তানদের মধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আয়োজনটি প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ এবং প্রথম আলো ট্রাস্ট ও প্রথম আলো লাইফস্টাইল ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ডা. মো. রাহেনুল ইসলামের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয় কীভাবে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা মানে দুই পক্ষই নিজ নিজ পরিমণ্ডলের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনে ব্যর্থ। দুই পক্ষেরই যোগাযোগের দক্ষতা কম। সন্তানকে সব সময় আগলে রাখার প্রবণতা যেমন ঠিক নয়, তেমন সন্তানের সব আচরণ, আবদার মেনে নেওয়াও ঠিক নয়। অভিভাবককে সন্তানের কিছু কিছু আচরণকে দৃঢ়ভাবে কিন্তু হাসিমুখে না বলতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় শিশুদের বলি,এই কাজটা করলে লোকে খারাপ বলবে। তারচেয়ে বরং সন্তানকে সরাসরি বলা, আমি এই কাজটা পছন্দ করি, বা পছন্দ করিনা। তাহলে শিশুর সঙ্গে যোগাযোগ বেশি সফল হবে।' সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে একটি সীমা থাকতে হবে। বয়স, সম্পর্ক, পরিস্থিতি ভেদে এই সীমারেখা বিভিন্নরকম হবে। যেমন অভিভাবককে জানতে হবে সন্তানের সামনে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে। চিৎকার করে কথা বলা যাবে কিনা, ভাঙচুর করা যাবে কিনা, দেয়ালে মাথা ঠোকা যাবে কিনা, গায়ে হাত তোলা যাবে কিনা। কেননা সন্তানের আচরণ তৈরি হয় অভিভাবকদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। সুতরাং সন্তানের সঙ্গে এবং সন্তানের সামনে যেমন আচরণ করবেন সন্তান তাঁর পরবর্তী জীবনে তেমনই আচরণ করবে।’

মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা

এই বিবেচনা বোধগুলো সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকের নিরাপদ সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করে। সুস্থ সম্পর্কের জন্য যেমন সন্তানের মতো করে চিন্তা করতে জানতে হবে। একই সঙ্গে জানতে হবে কখন কোথায় কিভাবে কতটুকু ছাড় দিতে হবে এবং সন্তানের সামনে আচরণ কেমন হবে।একজন অভিভাবক তাঁর সন্তানকে নিজের কাজে স্বাবলম্বী করতে না পারার অর্থ হলো সন্তানের সামাজিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করা। সবশেষে তিনি বলেন, যেই পরিবারে সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়,সন্তানের কথা শোনা হয়, সন্তানকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার অভ্যাস করা হয় সেই সকল পরিবারের সন্তানদের মাদকে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

করোনাকালে প্রতি মাসে দ্বিতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে বিকেল ৪টায় প্রথম আলো, প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ এবং প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল থেকে অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এই আয়োজনে দর্শকেরাও সরাসরি যুক্ত হয়ে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকদের প্রশ্ন করে প্রয়োজনীয় উত্তর জেনে নেন। অনলাইন আয়োজনের বিস্তারিত প্রথম আলো ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।