মাদকাসক্তি প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় পরিবারের করণীয়

রাফিনের (ছদ্মনাম) বয়স ১৬ বছর। ইদানীং মা–বাবার যেকোনো কথায় ঝাঁজিয়ে ওঠে! প্রায় সারা রাত জেগে থাকে। তার মেজাজ অনেক খিটখিটে হয়ে উঠছে। মুঠোফোনের পর্দায় চোখ রেখে সব সময় মাথা নিচু স্বরে থাকে। কান থেকে ইয়ারফোন খোলে না বললেই চলে। খাবার টেবিলে বসে সাধারণত খাবার খায় না। ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। পড়ালেখায় আগের মতো আগ্রহ পায় না, দিন দিন ফলাফলও খারাপ করছে। বাসার খাবারের চেয়ে বাইরের ফাস্ট ফুডে আগ্রহ। রাফিনের মতো সমস্যা এই বয়সী অনেক ছেলেমেয়ের মধ্যেই রয়েছে। এই সমস্যার নাম মাদকাসক্তি। সন্তান মাদকাসক্ত পরিবারের করণীয় সম্পর্কে জানালেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা.আহমেদ হেলাল।

মাদকাসক্তি প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় পরিবারের করণীয়:

সন্তানকে বুঝতে শিখুন। তার ভালো লাগা মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দিন। সন্তানের সঙ্গে গুণগত সময় কাটান। পারিবারিক সম্প্রীতি আর সৌহার্দ্য বজায় রাখুন। পরিবারকে সব আনন্দের কেন্দ্রে পরিণত করুন। একসঙ্গে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, বেড়াতে যান আর ক্যারম-লুডুর মতো ঘরোয়া খেলা খেলুন। দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে চলুন।সন্তানকে অহেতুক সন্দেহ করবেন না। তাকে কটাক্ষ করবেন না, কারও সঙ্গে তুলনা করবেন না।নিজে সন্তানের বন্ধু হোন। মাদক, মাদকাসক্তি এবং এর পরিণতি নিয়ে তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন—এ বিষয়ে তার মতামত মন দিয়ে শুনুন।

খেলাধুলা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করুন। গোপন নজরদারি করবেন না, সন্তানকে না জানিয়ে তার ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি দেখার চেষ্টা করবেন না। মোবাইল ফোনের অযৌক্তিক আর বেশি ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করুন। সন্তানের বন্ধু কারা, সে কাদের সঙ্গে মিশছে তা সরাসরি জানার চেষ্টা করুন।সন্তানের রাত জাগা ও দিনে ঘুমানোকে নিরুৎসাহিত করুন। বাইরে বা রেস্তোরাঁতে সে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে তাকে বাসায় বন্ধুদের ডেকে আড্ডা দিতে উৎসাহিত করুন। হাতখরচ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। অভিভাবকেরা যেকোনো ধরনের মাদক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন, পারিবারিক জীবনে নৈতিকতার চর্চা করুন। মাদকাসক্তির বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকেরা একে অপরের কাছে বা চিকিৎসকের কাছে কোনো মিথ্যা বলবেন না।মাদকাসক্তি একটি রোগ তাই আসক্তকে রোগী হিসেবে দেখুন, তাকে দোষারোপ করবেন না। মাদকমুক্ত হবে ভেবে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া বা বিয়ে দেওয়ার মতো ভুল পদক্ষেপ কখনোই নেবেন না। চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর বিদেশে পাঠান বা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।আপনজন মাদকে জড়িয়ে পড়লে তাকে ঘৃণা, বিদ্রূপ না করে, দূরে সরিয়ে না দিয়ে বুকে টেনে নিন। তাকে ত্যাগ করবেন না, চিকিৎসার উদ্যোগ নিন।আপনজনদের মধ্যে মাদকাসক্তির লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত মনোচিকিৎসকেরা শরণাপন্ন হোন, লক্ষণগুলো আড়াল করবেন না। নিজে নৈরাশ্যবাদী হবেন না এবং আরেকজনকেও নিরাশ করবেন না। মাদকাসক্তি একটি রোগ, এর বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়বেন না, প্রিয়জনকে অপচিকিৎসা থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগাযোগ করুন।

মাদকাসক্তি রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং এর কয়েকটি ধাপ রয়েছে, বিষয়টি মাথায় রেখে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।