‘বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় মাদক থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব’

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভা। করোনাকালে এ সভা চলছে অনলাইনে। গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজে মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটা থেকে আধা ঘণ্টার এই আয়োজনে অনলাইন মাদকবিরোধী পরামর্শ দেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান। অনলাইন এই অনুষ্ঠানে যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসে সেগুলো প্রশ্ন ও উত্তর আলোকে প্রকাশিত হচ্ছে। আজকে থাকছে তৃতীয় পর্ব।

প্রশ্ন: চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতে অনেক সময় বলা হয়, কেউ যদি আনুমানিক ২ বছর মাদক থেকে দূরে থাকে তার আবার মাদকে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। চিকিৎসাকালীন এই সময়ে মাদকাসক্ত রোগীর সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত?

উত্তর: মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সভায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. জিল্লুর রহমান খান বলেন, ‘মাদকমুক্ত হওয়ার চিকিৎসা একটি বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা। প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী আন্দোলনের সকল আয়োজনে আমরা বলেছি যে, বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় মাদক থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব। অন্যান্য চিকিৎসায় যেমন ওষুধের মাধ্যমে জীবনযাপনে পরিবর্তন আসে। মাদকাসক্তির থেকে সুস্থ হওয়ার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুনরায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা। মাদক মস্তিষ্কে একটি স্থায়ী পরিবর্তন নিয়ে আসে যা একজন মাদকাসক্ত রোগীর আচরণে বোঝা যায় এবং সেই পরিবর্তিত আচরণের কারণে তার পরিবারের লোকজন তাকে বিশ্বাস করে না। একজন মাদকাসক্ত রোগী যখন সুস্থ হয়ে বলে যে সে আর মাদক নিচ্ছেনা। তখন পরিবার তাকে বিশ্বাস করে না। এতে করে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারকে বুঝতে হবে যে মাদকাসক্তি একধরনের মস্তিষ্কের রোগ, সে অপরাধী নয়। অপরাধী সে, যে মাদক উৎপাদন করছে। সুতরাং যে মাদকাসক্ত তাকে চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে হবে, তাকে বিশ্বাস করতে হবে। যে মাদকাসক্ত হয়ে যায় সে তার জীবনের সকল কাজ থেকে সরে এসে ভাবতে থাকে, কিভাবে তার মাদকের সরবরাহ ঠিক রাখবে। সুতরাং চিকিৎসাকালীন সময়ে সে যেন তার জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলো করতে পারে, সে ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে হবে। পড়াশোনায় ফিরে আসতে হবে, চাকরির বা কাজের কোন ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তার ব্যক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সহায়তা করতে হবে। তাকে পুনর্বাসন করতে হবে। এই ব্যাপারে পরিবারের একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে আসতে হবে যে মাদকাসক্তি এক ধরনের অপরাধ। পাশাপাশি তাকে সেই নিয়ামকগুলো থেকে দূরে রাখতে হবে যার মাধ্যমে সে মাদকে আসক্ত হয়ে যেতো। যেমন তার আগের বন্ধু বা পরিচিতজন। সেই সময়ে তাকে সহায়তা দিতে হবে যেই সময়ে সে মাদক গ্রহণ করত। সেই সকল প্রভাবক থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে।’