পেলেন এমবিবিএসে পড়ার সুযোগ, স্বপ্ন তাঁর শিক্ষক হওয়ার

বাবা-মায়ের সঙ্গে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নাটোরের সুমাইয়া হোসেন।

পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মা-বাবা সুমাইয়ার বিয়ে ঠিক করেন। তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। শেষপর্যন্ত লেখাপড়ার খরচ নিজেই ব্যবস্থা করবেন, এমন প্রতিশ্রুতিতে পড়ালেখা করার অনুমতি পান তিনি। বন্ধ হয় বিয়ে। মনোযোগ দেন পড়াশোনায়। জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন। তাঁর সাফল্যের খবর ছাপা হয় প্রথম আলোয়ে এবং পাশে দাঁড়ায় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট ‘অপরাজেয় তার ‘ শিক্ষাবৃত্তি। বৃত্তির সহায়তায় পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিকেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখেন। তাঁকের স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখবে প্রথম আলো ট্রাস্ট।

এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি মেডিকেলে এমবিবিএস পড়ারে সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তিনি। সেই আনন্দে ভাসছে পুরো পরিবারসহ এলাকাবাসী।

আমি ছোটবেলায় শুধু পড়তে চাইতাম। কী হব, তা ভাবিনি। এসএসসি পাস করার পর ভেবেছি পড়ালেখা করে গণিতের শিক্ষক হব— বলেলেন সুমাইয়া হোসেন।

সুমাইয়া হোসেন নাটোর সদর উপজেলার হাড়িগাছা গ্রামের সাহাদত হোসেন ও শামীমা আক্তার দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে বড়। ২০২২ সাল থেকে তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট ‘অপরাজেয় তারা’ শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে আসছিলেন। এবার নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সদ্যঘোষিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

মেডিকেলে ভর্তির সুখবর নিয়ে সুমাইয়া তাঁর বাবা-মাকে নিয়ে নাটোর শহরে এসেছিলেন এই প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করতে। আলাপচারিতায় বাবা সাহাদত হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে পড়ালেখা করাতে পারব তা চিন্তাও করিনি। কিন্তু মেয়ে নিজে পড়ালেখা করার সংকল্প করেছিল। বিপদের সময় প্রথম আলো পাশে দাঁড়িয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা ওর প্রতি সহায় হয়েছেন। ওর মেডিকেলে ভর্তির খবর পেয়ে আমি খুশিতে কেঁদে ফেলেছি।’

মা শামীমা আক্তার বলেন, সুমাইয়া অসম্ভব আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলে। সে যা করতে চায়, তাই করে। পড়ালেখা নিয়েও সে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। কলেজে ওঠার পর ডাক্তার হওয়ার সংকল্প করেছিল। দিনরাত পড়ালেখা করত। অবশেষে আল্লাহপাক তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। আজ আমরাও তাকে নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখছি। ওর বাবা অসুস্থ। মেয়ের ডাক্তারি পড়ার কথা শুনে যেন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে।’

পড়ালেখায় পাশে দাঁড়ানোর জন্য সুমাইয়া ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় শুধু পড়তে চাইতাম। কী হব, তা ভাবিনি। এসএসসি পাস করার পর ভেবেছি পড়ালেখা করে গণিতের শিক্ষক হব। এইচএসসি পাস করার পর ভাবতে শুরু করলাম, ডাক্তার হব। প্রস্তুতি শুরু করি। সফলও হলাম। এখন ভাবছি, শিক্ষক হব, তবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হব। সবাই দোয়া করবেন।