ফরিদপুরের অদম্য মেধাবী সেলিনা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। গত রোববার দেশের সরকারি-বেসরকারি এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। মেরিট লিস্ট অনুযায়ী তাঁর অবস্থান ১২৩।
সেলিনা ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে তাঁকে নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় অদম্য মেধাবী শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় সেলিনাকে ২০২৩ সালে বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসে প্রথম আলো ট্রাস্ট। তাকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট ‘অপরাজেয় তারা’ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তির সহায়তায় সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজে এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। এ বছর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য ধরে রাখেন তিনি। ভালো ফলাফল বিবেচনায় সেলিনাকে স্নাতক পর্যায়েও শিক্ষাবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সেলিনা কৃষ্ণ নগর ইউনিয়নের হাটগোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবা মো. সেলিম শেখে একটি দোকানে দরজির কর্মচারী। মা ফরিদা পারভীন গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে সেলিনা বড়। ছোট বোন সামিয়া সুলতানা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এলাকায় দুই শতাংশ জমির ওপর একটি টিনের দোচালা ঘরে বসবাস করে এ পরিবারটি। সংসারে উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি তার বাবা।
সেলিনা জানান, ‘একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমি। আমি তো দেখেছি কত কষ্টে আমার বাবা ও মা আমারে পড়াশোনার কাজ চালিয়েছেন। এসএসসি পরীক্ষার পর ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি আমাকে দারুণ ভাবে সাহায্য করেছে। এ বৃত্তিটা না পেলে আজ এত দূর আসতে পারতাম কিনা তা ভাবতেও পারছি না। তা ছাড়া আব্বা-আম্মা সব সময় পাশে ছিলেন। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষকদের গাইড পেয়েছি। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি। আমি যা আশা করেছি তাই পেয়েছি।’
সেলিনা তাঁর স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়া স্বপ্ন দেখে আসছি। বিশেষত কার্ডিওলজিস্ট হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। আমি জানি চিকিৎসক হওয়ার পর হাতেগোনা কয়েকজন চিকিৎসক পাওয়া যায় যাদের মধ্যে মানুষের সেবা করার মানসিকতা আছে। আমি সেই হাতেগোনাদের দলে থাকতে চাই। থাকতে চাই বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে। এর পাশাপাশি আরেকটি স্বপ্ন আমি বুকে লালন ও ধারণ করি। সেটা হলো বিশ্ব সমাজের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরার। এ জন্য যুক্ত হতে চাই ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনে। সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ভূমিকা রাখতে চাই।
কথা হয় সেলিনার বাবা মো. সেলিম শেখের সঙ্গে। মেয়ের জন্য আনন্দিত বাবা জানান, আমি অন্যের দোকানে দরজির কর্মচারী হিসেবে কাজ করি। চোখের সমস্যা। এ জন্য বেশিক্ষণ কাজ করতে পারি না। রাত জাগতে পারি না। ঘুম কম হলে মাথা ব্যথা হতো। মেয়ের পড়ার খরচ জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। ভরসা পেয়েছি তখনই যেদিন থেকে সেলিনা প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তিটা পায়। এতে আমার কষ্ট অনেক লাঘব হয়।