ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট ‘অপরাজেয় তারা’ শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া মাহমুদা আক্তার এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি এমবিবিএস-বিডিএসের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। গত রোববার বিকেলে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তিনি ৪১০১ তম হয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেলে কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এবার পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
মাহমুদার বাবা রেজাউল করিম পেশায় একজন পোশাকশ্রমিক ছিলেন। করোনা মহামারির সময় চাকরি খুইয়ে বেকার হয়ে পড়েন। অভাবের সংসারে মেয়ের পড়ালেখার খরচ দিতে পারতেন না। বাধ্য হয়ে মাহমুদা প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেত। এভাবে পড়াশোনা করে মাহমুদা ২০২৩ সালে ধুনট সরকারি নইম উদ্দীন পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান।
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে ভালো ফল করায় প্রথম আলোর ধুনট প্রতিনিধি এই অদম্য মেধাবীকে নিয়ে প্রতিবেদন পাঠান। প্রথম আলোয় ছাপা হয়। তারপর তাঁর পারিবারিক অবস্থা ও পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ বিবেচনা করে মাহমুদাকে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট ‘অপরাজেয় তারা’ শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা হয়। এই বৃত্তির সহায়তায় বগুড়ায় সরকারি আজিজুল হক কলেজে এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। এ বছর অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষায় বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্য ধরে রাখেন। ভালো ফলাফল বিবেচনায় মাহমুদাকে স্নাতক পর্যায়েও ভিক্ষাবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মাহমুদাদের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদর ইউনিয়নের পারধুনট গ্রামে। মাহমুদার ছোট ভাই এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মাহমুদা জানান, ‘আমার স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। সেই সুযোগটা তৈরি হলো। আপনারা দোয়া করবেন যেন ভালো চিকিৎসক হতে পারি।’
মাহমুদার বাবা বলেন, ‘আমি পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। এখন শরীর ভালো না, সারা শরীর ব্যথা। তেমন কোনো কাজ করতে পরি না। বাড়ির পাশে একটা ছোট বেকারী চালিয়ে যা আয় হয়, তাই দিয়ে সংসার চালাই। প্রথম আলো ট্রাস্ট, ব্র্যাক ব্যাংক পাশে ছিল বলে আজ আমার মেয়ে এ পর্যন্ত আসতে পারছে। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সহযোগিতা না পেলে হয়তো আমার মেয়ে আজ ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেত না।’