‘সাইকেল আমাকে পড়ালেখার একটা সুযোগ করে দিয়েছে’

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম।

‘সাইকেল পেয়ে আমি যেন পড়ালেখা করার নতুন করে একটা সুযোগ পেলাম। আমার বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে। বর্ষাকালে প্রতিদিন পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। কারণ বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত পুরোটাই মাটির রাস্তা। আমার স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হতো। মাঝে মাঝেই স্কুলে যেতে দেরি হয়ে যেত। হেঁটে এসে অনেক ক্লান্ত হয়ে যেতাম। ক্লাসে পড়ায় মন বসত না। এই জন্য আমার খুব খারাপ লাগত। আমাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার মত সামর্থ্য আমার বাবার নেই। এক সময় মনে হচ্ছিল আমার আর পড়ালেখা করা হবে না। তারপর একদিন স্কুল থেকে আমাকে একটা সাইকেল দেওয়া হয়। সাইকেল পেয়ে আমি ঠিক সময়ে স্কুলে আসতে পারি। পড়ালেখায় ভালো মনযোগ দিতে পারি। সাইকেল পেয়ে আমার খুব উপকার হয়েছে।’ এভাবেই মনের আবেগ ব্যক্ত করলেন গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম।

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার ছাত্রীরা বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছে।
ছবি: প্রথম আলো

আলিমের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলত থ্যাকে সাইকেল পাওয়া যাবে হামি ভাবিনি। তা ছাড়া হামার সাইকেল কিনে দেওয়ারও সামর্থ্য নাই। সাইকেল পাওয়ার পর হামি খুব খুশি হছি, হামার বেটাও খুব খুশি হছে। হামার ব্যাটার সাইকেল চালানোর শখ স্কুল পূরণ করে দিছে। যা হামি পারিনি। স্কুল থ্যাকে আরও মেলাই উপহার পাছি, করোনার সময় ত্রাণ, ঈদের উপহার, মাশারি আরও মেলাই কিছু।’

গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক নুর আলম বলেন, ‘এই স্কুলের সাফল্যে এই গ্রামটি এখন উপজেলাতে পরিচিতি লাভ করেছে। ঢাকার কিছু মহান ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ে ২৮টি সাইকেল প্রদান করেন। এই সাইকেলগুলো বিভিন্ন ক্যাটাগরিতেে শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে সাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। সাইকেল প্রদানের ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পড়াশোনায় ও মনোযোগী হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ফলাফল এখন অনেক ভালো হচ্ছে।’

মেয়েদের সাইকেলে করে বিদ্যালয়ে যাতায়াত প্রসঙ্গে গুড়িহারী গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমি কখনো মেয়েদের সাইকেল চালাতে দেখিনি। আলোর পাঠশালা হওয়ার পর দেখলাম মেয়েরাও সাইকেল চালাচ্ছে। স্কুল ছুটির পর যখন ছাত্রীরা এক সঙ্গে দল বেঁধে সাইকেল নিয়ে যায় তখন দেখতে খুব ভালো লাগে।’

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো গুড়িহারী কামদেবপুর আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।