বাল্যবিয়ে রোধে নাসরিন খাতুন কাজ করেন

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাসরিন খাতুন (বাঁ থেকে তৃতীয়)।

খিদিরপুর চরে এক সময় হাজারো মানুষের বসবাস ছিল। জেলে নদীতে মাছ ধরত, কৃষকেরা মাঠে কাজ করত। গবাদিপশু পালন করে চরের মানুষেরা ছিল স্বাবলম্বী। ধীরে ধীরে নদী ভাঙনের ফলে লোকসংখ্যা কমতে থাকে। রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামটিতে তাদের কৃষি ও বসবাসের জায়গা নদীতে বিলীন হওয়ায় জনজীবনে নেমে আসে নানা দূর্ভোগ। একটি মাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে ছিল না কোন মাধ্যমিক স্কুল। তাই তারা প্রাথমিকে থাকতেই তাদের মেয়েদের বিয়ে দিত এবং ছেলেরা ভাবত স্কুলে গিয়ে কোন টাকা পাওয়া যায় না, তাই লেখাপড়া করার দরকার নেই । ২০১৫ সালে প্রথম আলো ট্রাস্ট সামিট গ্রুপের সহায়তায় চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করে। সেখানে বিনা বেতনে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়।

নববর্ষের র‌্যালিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাসরি খাতুন।

নাসরিন খাতুন রাজশাহী শহরে বসবাস করেন। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে নাসরিনের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। পরে ২০১৫ সালে চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালা সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

নাসরিন খাতুন জানালেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে আমি সেখানে শিক্ষকতার দায়িত্ব নেই। যোগদান করার পর থেকেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে কাজ করি । যে সকল ছেলেরা নদীতে মাছ ধরত, বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করত, গরুর রাখাল হত সে সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে বুঝিয়ে স্কুলে আনানোর ব্যবস্থা করি।

শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন নাসরিন খাতুন।

এই চরে একসময় শত ভাগ বাল্যবিয়ে হতো সেখানে বাল্যবিয়ের কুফল ও নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি সেখানে মেয়েদের স্কুলমুখী করছেন। কমিয়েছেন বাল্যবিয়ের হার। প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালায় বিনা বেতনে পড়ানো হয় জেনে তারাও আগ্রহী। দীর্ঘ ৫ বছর সেখানে প্রমত্তা পদ্মা পার হয়ে তিনি পাঠদান করিয়েছেন। বর্তমানে রাজশাহী আলোর পাঠশালা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাজলা এলাকায় স্থানান্তর হয়। নাসরিন খাতুন দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা করছেন।