বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা করার জন্য প্রচারণা চালান আলী আজগর

এক শিক্ষার্থীকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন মদনপুর আলোর পাঠশালার সহকারী শিক্ষক আলী আজগর।

ভোলা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা একটা চরের নাম মদনপুর। এই চরে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। পঞ্চম শ্রেণির পরে শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হাতে গোনা দু-একজন অভিভাবক তাদের সন্তানকে পড়াশোনার জন্য অন্য এলাকার বিদ্যালয়ে পাঠাতেন।

মদনপুর চরের বাসিন্দা আলী আজগর। সেখানে থেকেই তিনি পড়াশোনা করেছেন। তিনি দেখেছেন, এখানে তার বন্ধুরা মাঠে গরু চড়ায়, নদীতে মাছ ধরে। এগুলো তার মনে ভীষণ নাড়া দিত। তিনি ভাবেন, পড়াশোনা করে এক সময় তিনি এই এলাকার শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। তিনি ডিগ্রিতে পড়াকালীন চরের ছেলেমেয়েদের কি করে শিক্ষিত করা যায় এসব চিন্তা থেকেই ২০১৩ সালে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও এলাকার মুরব্বিদেরকে নিয়ে স্কুল করার পরিকল্পনা করেন। কোন স্কুল ঘর না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে ক্লাস শুরু করেন মাত্র ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে। স্কুল চালু হওয়ার পরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে । ২০১৫ সালে প্রথম আলো ট্রাস্ট সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠিত হয় মদনপুর আলোর পাঠশালা। এই বিদ্যালয়ে আলী আজগর সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মদনপুর আলোর পাঠশালার সহকারী শিক্ষক আলী আজগর।

আলী আজগর শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে এলাকায় বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা করার জন্য প্রচারণা চালান। মদনপুর চর এলাকায় পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ছাত্ররা নদীতে মাছ ধরতে যায়। আলী আসগর সেই সব ছাত্রের তালিকা করেন। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক ছাত্রের বাড়ি বাড়ি যান । তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন । অভিভাবকেদের নিয়ে স্কুলে একটা বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই বৈঠকে প্রধান শিক্ষকসহ আলী আজগর ছাত্রীদের বাল্য বিয়ের কুফল ও ছেলেদের মাছ ধরার পাশাপাশি স্কুলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তারপর থেকে মাঝে মাঝে দিনের বেলা স্কুল শেষে বিকালবেলা ঝরে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের বাসায় বাসায় যেতেন। আলী আজগর ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির গণিত ক্লাস ও কম্পিউটার ট্রেনিং দেন।

মদনপুর আলোর পাঠশালার সহকারী শিক্ষক আলী আজগর।

মদনপুর আলোর পাঠশালার প্রাক্তন ছাত্র সোহেল ইমরান ভোলা কলেজে অনার্স পড়ছেন। সোহেল ইমরানের বাবা জানালেন, ‘আলী আজগর স্যার আমার ছেলেকে বাসায় এসে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। ও স্কুলে না গেলে আমাকে জানাতেন। এ কারণেই আজ আমার ছেলে ভোলা কলেজে অনার্সে পড়তেছে।’

মদনপুর আলোর পাঠশালার আরেক প্রাক্তন ছাত্র মেহেদী মামুনের বাবা বলেন, আলী আজগর স্যার আমার ছেলের পড়াশোনার খোঁজ খবর নিতেন। মেহেদী মামুন এখন পুলিশে চাকরির চেষ্টা করছেন। স্যার খোঁজ খবর না নিলে আমার সন্তানও আমার মত নদীতে মাছ ধরতো।’