বাবুডাইং আলোর পাঠশালায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ‘বাবুডাইং আলোর পাঠশালার’ কোল জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
ছবি: প্রথম আলো

গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল সোমবার ‘ইংবেন বয়হাওয়া রাগোয়া ইকুশ না: ফেব্রুয়ারি, ইংকি আত হিরিং ইং.... অর্থাৎ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি..... কোল ও বাংলা ভাষায় একুশের গান গেয়ে প্রভাতফেরির আয়োজন করা হয়। প্রভাতফেরির পর নিজেদের বানানো শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, ছড়া, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন করেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা।

দিবসটি উপলক্ষে সাত দিন আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা মাটি নিয়ে এসে শহীদ মিনারের বেদি তৈরি করে। এরপর বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। বেদি প্রাঙ্গণ লেপে পুছে আলপনা আঁকে। এরপর সোমবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে প্রভাতফেরি বের করা হয়। এতে সকল শিক্ষার্থী, গ্রামবাসী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরাও অংশ নেয়। প্রভাতফেরি শেষে শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এরপর গ্রামের মোড়ল মাধব কোল সরেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সুজারুদ্দিন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, গ্রামের মোড়ল সুরেন কোল টুডু, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা মতিউর রহমান, সাবেক সভাপতি ওজিফা খাতুন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাঈদ মাহমুদ।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ‘বাবুডাইং আলোর পাঠশালার’ কোল জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
ছবি: প্রথম আলো

কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থী ‍লাবিবা, মমতা হাসদা, দীপ। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের কোল সাংস্কৃতিক দল নাচ পরিবেশন করেন।

বক্তারা বলেন, বরেন্দ্রর এই গহিনে অবস্থিত কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের বাস। এ ছাড়া পদ্মা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাবুডাইং বনের পাশে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি মানুষজন বাস করে এই এলাকায়। উভয় সম্প্রদায়ের সন্তানেরা এ আলোর পাঠশালা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এ পাঠশালার কারণেই নিভৃতের এ গ্রামে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপিত হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই শহীদ মিনার তৈরির কাজ করে থাকে। প্রভাতফেরিতে সকলে বুনোফুল নিয়ে অংশ নেয়। এরপর শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে। নিজেদের ভাষায় গান গায়। সব মিলিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে নানা কর্মকাণ্ড করে থাকে। যা সচরাচর অন্যান্য জায়গায় দেখা যায় না। এ উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। এটি চলমান থাকুক।