পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরতে চান ললিতা

বাবুডাইং আলোর পাঠশালা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ললিতা কোল টুডু। বিদায় সংবর্ধনায় অনুভূতি প্রকাশ করছেন ললিতা।

চার বোন ও বাবা-মায়ের সংসারে বড় মেয়ে ললিতা কোল টুডু। জীর্ণ-শীর্ণ ঘরে গাদাগাদি করে বেড়ে উঠেন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি ধান রোপণ, ধান কাটা, মাড়াই, আম ও বরই বাগানে পরিচর্যার কাজ করেন। এ থেকে যে টাকা পান তা দিয়ে নিজের স্বল্প চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সংসারের কাজে ব্যয় করেন। এতে বাবার উপর চাপও কিছুটা কম হয়। ললিতা কোল টুডু এবার বাবুডাইং আলোর পাঠশালা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামের সোনাতন টুডু ও ময়না মুরমুর বড় মেয়ে তিনি। তার ছোট দুই বোনও আলোর পাঠশালার পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা একজন দিনমজুর। কখনো কাজ থাকে, কখনো থাকে না। মা প্রায়েই অসুস্থ থাকেন। তখন ছোট তিন বোনসহ সংসারের যাবতীয় কাজের চাপ পড়ে তাঁর উপর। সংসারের রান্নার কাজ, কাপড়-চোপড় পরিষ্কারের কাজ, বাড়ি ঘর পরিচ্ছন্নতার কাজ, বোনের দেখভালের কাজ একাই করেন। দেখভাল করেন গরু-ছাগলেরও। এরপরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয় কুপির আলোয়।

ললিতা কোল টুডু বলেন, ‘এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হতে চাই। কলেজ পাস করে একটি সম্মানজনক চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে চাই। পাশাপাশি আমাদের ছোট ভাই-বোনদের পড়াতে চাই বিনা মূল্যে।’

বাবুডাইং আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর বলেন, ‘ললিতা টুডু খুবই পরিশ্রমী মেয়ে। তার মানসিক শক্তি অনেক। সে বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের সদস্য, সে সুন্দর আলপনাও আঁকতে পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময় কাজ করে অর্থ উপার্জন করে নিজের চাহিদা মেটানোর পর সংসারেও সাহায্য করে।’

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো বাবুডাইং আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।