পদ্মা পাড়ি দিয়ে, পায়ে হেঁটে চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালায় পড়িয়েছেন রেজিনা আপা

প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ কি.মি পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে রাজশাহীর চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালাতে পাঠদান করাতে ছুটেছেন রেজিনা খাতুন।

রাজশাহীর তানোর গ্রামে তখন বাল্য বিয়ের হিড়িক। তখন বিয়ে না করে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যান রেজিনা খাতুন। ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে। কিন্তু স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় । বিয়ের পরেও থেমে থাকিনি তাঁর পড়ালেখা। পড়ালেখা শেষ করে শ্বশুর বাড়ির কাছাকাছি একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা হিসাবে চাকুরে শুরু করেন। চাকরির এক বছর পর চাকরি ছেড়ে দেন। ফিরে আসেন রাজশাহীতে । ব্র্যাকের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্বামী চাকরি করেন রাজশাহীর একটি বালিকা বিদ্যালয়ে ।

২০১৭ সালে রাজশাহীর প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালাতে যোগদান করেন প্রধান শিক্ষক হিসাবে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ কি.মি পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে, কখনও পায়ে হেঁটে আবার বর্ষার সময় পানিভর্তি পদ্মা নদীতে নৌকা করে পার হয়ে রাজশাহীর চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালাতে পাঠদান করাতে ছুটেছেন। এরকম দুর্গম এলাকাতে, ভয়ানক পরিস্থিতির মাঝেও সারা বছরে একদিনও ছুটি কাটাননি তিনি এবং তাঁর প্রচেষ্টায় বিদ্যালয় থেকে জি.পি.এ ৫ ফলাফল অর্জন করেছে অনেক শিক্ষার্থী। চর খিদিরপুর ভেঙে যাওয়াতে আলোর পাঠশালাটি রাজশাহীর তালাইমারিতে স্থানান্তরিত করা হয়। রেজিনা খাতুন এখনও রাজশাহী আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

করোনাকালে রেজিনা খাতুনসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়া দেখিয়ে দিয়ে এসেছেন।

রেজিনা খাতুন বলেন, ‘আমি সব সময় সাহস রেখেছি নিজের প্রতি। আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা শিখে শিক্ষকতা করব। কিন্তু বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির কারণে আমার বিয়ের পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমার স্বামীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতার মাধ্যমে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সক্ষম হই।’

করোনাকালে তিনি সহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়া দেখিয়ে দিয়ে এসেছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকের পরিশ্রমের ফলে রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষাতে শতভাগ পাস করে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বর্তমানে ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।