নিজ এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন আতাউর রহমান

খেলাধুলা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি বছর শিক্ষা সফরের আয়োজন করেন প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান।

কুড়িগ্রাম সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় প্রথম আলো চর। সেই চরে কোন প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুল ছিল না । গ্রাম থেকে অনেক দূরের একটি স্কুলে পড়তে যেতে হত গ্রামের শিক্ষার্থীদের। যাতায়াত সহ নানা সমস্যার মুখে পড়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ হতে বসেছিল। বিষয়টি লক্ষ্য করে গ্রামের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহায়তায়, প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুড়িগ্রাম সদরের ছেলে আতাউর রহমান তখন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করে ঢাকায় ভালো বেতনে একটি চাকরি করতেন।

এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে শহুরে জীবন ছেড়ে সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জীবন এগিয়ে নিতে ঢাকার চাকরি ছেড়ে কুড়িগ্রামের প্রথম আলো চরে শিক্ষকতা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৫ সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে নিজের মেধা ও যোগ্যতায় ২০১৮ সালে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন আতাউর রহমান। স্কুল এবং শিক্ষার্থীদের যাবতীয় বিষয়ে তাঁর আগ্রহের সীমা নেই। তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাঝে চিত্রাঙ্কন, রচনা, সুন্দর হাতের লেখনী ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকেন। নিজ দায়িত্বে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ফুটবল ও ক্রিকেট দল গঠন করেন। দলের নাম দেন প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা ফুটবল দল ও প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা ক্রিকেট দল।

প্রথম আলো চরের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান ব্যাপারী বলেন, ‘কিছু দিন আগেও এই চরের বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে ধারণা ছিল না কিন্তু এই স্কুলের মাধ্যমেই তারা এখন এই খেলায় মেতেছেন। গ্রামে মাঠ নাই তারপরও স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান স্কুলের এই ছোট মাঠেই ফুটবল ও ক্রিকেট দলের প্র্যাকটিস করান। খেলাধুলা দেখে আমাদের বিকেল বেলার অবসর সময়টা ভালই কেটে যায়।’

আব্দুস সোবহান ব্যাপারী আরও বলেন, ‘যেকোনো উৎসব বা বিভিন্ন জাতীয় দিবস বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস বা ঈদে ‘গ্রাম একাদশ' ও 'প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা ফুটবল বা ক্রিকেট একাদশ এর মধ্যে খেলাধুলার আয়োজন করে থাকে। গ্রামবাসী এই খেলাকে খুবই আনন্দের সাথে উপভোগ করে। শুধু তাই নয় প্রতি বছর আন্তঃ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। স্কুলের ক্লাস শেষে আতাউর রহমানের পরিচালনায় ছাত্রীদের ক্রিকেট খেলার প্র্যাকটিস করাতে দেখি। এভাবে এই খেলাধুলার মাধ্যমে ও প্রথম আলো স্কুলের মাধ্যমে এই চরের পরিচিতিও খুব বেড়ে গেছে আশপাশের বিভিন্ন চরে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টের অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেছে এই আলোর পাঠশালার ফুটবল ও ক্রিকেট দল। ২০১৮ সালে আন্তঃচর ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। খেলাধুলা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি বছর শিক্ষা সফরের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখার সুযোগ পায়।'

আতাউর রহমান বলেন, 'আমি শিক্ষকতা পেশা খুবই ভালোবাসি। এই প্রত্যন্ত এলাকার বাচ্চাদের সুনাগরিক হিসাবে তৈরি করার কাজে থাকতে পেরে আমি গৌরবান্বিত। আমি এখন স্বপ্ন দেখি তাদেরকে নিয়ে। নিজ এলাকার ছেলেমেয়েদের মাঝে নিজের অর্জিত জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের শিক্ষিত করার লক্ষে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছি। আলোর পাঠশালাতে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর থেকে পিএসসি এবং জে.এস.সি পরীক্ষায় প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করে আসছে।' বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট বর্তমানে ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে।