ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে চরের মাস্টার রিপন আলী

রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক রিপন আলী।

২০০৯ সালে লেখাপড়ার সুবাদে রাজশাহী এসে প্রথম আলো বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হন রিপন আলী। কলেজের পাশাপাশি বন্ধুসভার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এক এক করে একাডেমিক জীবনে শেষে তাঁর থলিতে জুগিয়েছেন ৪ টি প্রথম শ্রেণির সনদ। স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৭ রাজশাহী পবা উপজেলার চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হন রিপন আলী। ২০২১ সালে চরখিদিরপুর থেকে স্কুলটি রাজশাহীতে স্থানান্তর হলে রিপন আলী রাজশাহী আলোর পাঠশালায় সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন।

রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক রিপন আলী।

বিদ্যালয়ে যুক্ত হওয়ার আগে বন্ধুসভার কার্যক্রমে চরাঞ্চলে গিয়ে সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য তারঁ মন কাড়লেও সে অঞ্চলের মানুষদের দুঃখ-দুর্দশা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত মানুষদের করুণ দশা ও শতভাগ বাল্যবিবাহ দেখে তিনি বিস্মিত হয়। তিনি মনে করেন, চরের মানুষদের এ অন্ধকার ও কুসংস্কার দূর করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। সেই আগ্রহ থেকেই মূলত তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সূচনা।

রাজশাহী শহর থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮ কিমি. নদী পার হয়ে নিয়মিত স্কুল করতেন তিনি। বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি এলাকার বাল্য বিয়ে সম্পর্কে সচেতন করেন এবং শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। এ ছাড়া স্কুলের সকল কর্মকাণ্ডে রয়েছে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা।

রাজশাহী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক রিপন আলী।

প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুল করতে কষ্ট কেমন হয় জানতে চাইলে রিপন আলী বলেন, শিক্ষকতা সম্মানের পেশা। প্রত্যন্ত,দুর্গম, সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে পেরে আমি ধন্য। কখনো ভরা যৌবনা পদ্মা, কখনো খাঁ খাঁ করা তপ্ত রোদে বালুময় পদ্মায় এক ঘণ্টা হাঁটা এ কোনো কিছুতেই কোন কষ্ট ছিল না। শহর থেকে যখন ওপারের স্কুলে বাচ্চাদের মুখ দেখি তখন সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।

আলোর পাঠশালা থেকে যে সকল শিক্ষার্থী প্রাক্তন হয়েছেন তিনি এখনো সে সব শিক্ষার্থীদের নিয়মিত খোঁজ রাখেন।