কুলির কাজ বাদ দিয়ে পড়াশোনা করছে সৈয়দুল আমিন
সৈয়দুল আমিনের বয়স এগার। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবার মৃত্যুর পর সৈয়দুল আমিনের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য কখনও দমদমিয়া জাহাজ ঘাটে কুলির কাজ করত, কখনও নাফ নদীতে কাঁকড়া শিকার করত। কখনও আবার মায়ের সঙ্গে পাহাড়ে কাঠ কাটতে যেত।
দমদমিয়া আলোর পাঠশালার শিক্ষকেরা সৈয়দুল আমিনকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে নেন। সৈয়দুল আমিনের মতো অনেকেই জাহাজ ঘাটে কুলির কাজ বাদ দিয়ে এখন আলোর পাঠশালায় পড়াশোনা করছে।
সৈয়দুল আমিনের মা মাহামুদা খাতুন বলেন, ’বেতন দিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করানো আদৌ সম্ভব ছিল না। এই মহামারীর সময়ে দুইবার ত্রাণ পেয়েছি। এখন আমি খুশি আমার ছেলে স্কুলে যায়, আর কুলির কাজ করে না।’
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হৃীলা এলাকায় দমদমিয়া গ্রাম। বিজিবি ক্যাম্পের কাছে। নাফ নদীর এক পাশে মিয়ানমার সীমান্ত। অন্য পাশে বাংলাদেশ। এ গ্রামে প্রায় ৮ হাজার মানুষের বসবাস। এই গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বিদ্যালয় নেই। স্থানীয় দানশীল ব্যক্তি হাজি শামসুল হক ৪০শতক জমি দেন । নিজ উদ্যোগে ১৯৯৪ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতেই ছাত্রসংখ্যা কম ছিল। ছাপড়ার ঘরে স্কুলের কার্যক্রম দেখে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি পাকা একতলা বিল্ডিং করে দেয়। ৪টি রুম ও তিনটি টয়লেট রয়েছে এখানে। একটি খেলার মাঠও রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে স্কুলটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ২০২০ সালে প্রথম আলো ট্রাস্ট স্কুলটির দায়িত্ব নেয়। তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬৪ জন ও শিক্ষক ছিলেন মাত্র ২জন। বর্তমানে স্কুলের ১৯০জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে বহুদিন শিক্ষার আলো পৌঁছায়নি এ রকম অবহেলিত কয়েকটি এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। সামিট গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় প্রথম আলো ট্রাস্ট কক্সবাজারের টেকনাফে দমদমিয়া আলোর পাঠশালাসহ ৬টি স্কুল পরিচালনা করছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আলোর পাঠশালা বন্ধ রয়েছে।